ইডেনে চরম অপদস্থ সেই অশ্বিন!

বুধবার ইডেনে প্রীতি বনাম শাহরুখ, রাসেল বনাম গেইলের লড়াই দেখতে ইডেন ভরিয়েছিলেন দর্শকরা। তবে এসবকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল একটি আলোচনা। রবিচন্দ্রনের অশ্বিনের মানকড়িং। আর তাই বুধবার কলকাতার বিশেষ নজর ছিল সেই মানুষটির দিকেই। এত সহজে যে বিতর্ক তার পিছু ছাড়বে না, তা প্রত্যাশিতই ছিল। হলোও তেমনটাই। নিজের চার ওভারে ৪৭ রান দিয়ে নেটিজেনদের হাসির খোরাকে পরিণত হলেন ভারতীয় স্পিনার।

রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে নন-স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা জস বাটলারকে ডেলিভারির আগেই রানআউট করে বিতর্ক তৈরি করেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক অশ্বিন। তারপর থেকেই মানকড়িং নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত ক্রিকেট দুনিয়া। অনেকেই অশ্বিনের ক্রিকেটীয় স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকের মতে, বাটলারকে অন্তত একবার সতর্ক করা উচিত ছিল অশ্বিনের। এমন পরিস্থিতিতেই ইডেনে নাইটবাহিনীর বিরুদ্ধে নামে তার দল। অশ্বিনের চারটি ওভারের দিকে বিশেষ নজর ছিল দর্শকদের। শুধু ইডেনে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীরাই নয়, অশ্বিনের হাত ঘোরানোর অপেক্ষায় ছিলেন নেটিজেনরাও। আর তার নির্ধারিত চার ওভার শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় মশকরা। ভারতীয় স্পিনারের দিকে একের পর এক কটাক্ষের তির ছুটে আসে। হাজারো বাক্যবাণে বিদ্ধ পাঞ্জাব নেতা। চার ওভার বল করে ৪৭ রান দিয়ে একটিও উইকেট পাননি তিনি। উলটে নীতিশ রানার কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয় তাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই কটাক্ষের সুরে লেখেন, মানকড়িং ছাড়া এদিন আর উইকেট পাওয়া হল না অশ্বিনের। এও টুইট করা হয়, কাকে মানকড়িং করা যায়, সে সুযোগই খুঁজছিলেন অশ্বিন। তা না হওয়ায় আর উইকেট জুটল না তার ভাগ্যে। এমনকী অশ্বিনকে কটাক্ষের সুরে পরামর্শ দিতেও ছাড়েননি অনেকে। লিখেছেন, অশ্বিনের উচিত ছিল বাকি বোলারদেরও মানকড়িংয়ের পরামর্শ দেয়া। নেটদুনিয়ার পাশাপাশি এদিন অশ্বিনের আচরণে খুশি নয় ইডেনও। মোহাম্মদ শামির ওভারে আম্পায়ার ফ্রি-হিটের ইশারা করলে মেজাজ হারান অশ্বিন। আর তাতেই তার উদ্দেশে নাইট সমর্থকরা কটাক্ষ ভরা আওয়াজ করতে থাকেন। সবমিলিয়ে দিনটা একেবারেই ভাল গেল না অশ্বিনের।

অশ্বিনের ভুলে ম‍্যাচ হাতছাড়া পঞ্জাবের
সুযোগের সদ্ব্যবহার বোধহয় একেই বলে৷ কথায় আছে ভাগ্য সাহসীদের সঙ্গ দেয়৷ ইডেনে বহুপ্রচলিত বাংলা প্রবাদটি যথার্থ প্রমাণিত হলো আরেকবার৷ কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ভাগ্যদেবী সঙ্গ দিলেন আন্দ্রে রাসেলকে৷ উদ্ধত রাসেল এমন অযাচিত বদান্যতার সদ্ব্যবহার করে নাইট রাইডার্সকে পৌঁছে দেন নিরাপদ আশ্রয়ে৷

এক্ষেত্রে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের একটা ভুল সিদ্ধান্ত রাসেলকে জীবন দান করে বললে ভুল বলা হয় না মোটেও৷ কেননা ক্যাপ্টেন অশ্বিনের ব্যর্থতাই রাসেল তথা কেকেআর শিবিরকে বাড়তি সুবিধা করে দেয়৷ দিনের শেষে অশ্বিনের ভুলের বড়োসড়ো মাশুল চোকাতে হয় পাঞ্জাবকে৷

কেকেআর ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে যখন মোহাম্মদ সামির অনবদ্য ইয়র্কারে বোল্ড হন আন্দ্রে রাসেল, তখন নাইট রাইডার্সের স্কোর ছিল ১৬১৷ রাসেল সাজঘরে ফিরলে সেটি হতো কলকাতার চতুর্থ উইকেটের পতন৷ শেষ তিন ওভারে তখন কেকেআরের পক্ষে দু’শ’ রানের গণ্ডি ছোঁয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াত৷ সেই অবস্থায় স্কোরবোর্ডে ১৯০ রান তুলতে পারলেই কেকেআর খুশি হতে নিশ্চিত৷

অশ্বিনের একটা ছোট্ট ভুলেই ছবিটা বদলে যায় পুরোপুরি৷ মোহম্মদ সামির যে বলটিতে রাসেল বোল্ড হন, সেই সময় ফিল্ড প্লেসমেন্টে গলদ ধরা পড়ে৷ পাওয়ার প্লে’র পরে বোলার ও উইকেটকিপার ছাড়াও ৩০ গজের বৃত্তের ভিতরে ন্যূনতম ৪ জন ফিল্ডার রাখা বাধ্যতামূলক৷ এক্ষেত্রে পাঞ্জাবের ৩ জন ফিল্ডার ছিলেন বৃত্তের ভিতরে৷ ৫ জনের পরিবর্তে অশ্বিন ৬ জন ফিল্ডার রেখেছিলেন বৃত্তের বাইরে৷

রাসেল মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রায়৷ তৃতীয় আম্পায়ারের নির্দেশ পাওয়ার পরই তড়িঘড়ি রাসেলকে ক্রিজে ডেকে নেন ফিল্ড আম্পায়াররা৷ মাত্র ৩ রানে জীবনদান পাওয়া আন্দ্রে রাসেল ক্রিজে ঝড় তোলেন এরপর৷ শেষ পর্যন্ত ১৭ বলে ৪৮ রান করে ক্রিজ ছাড়েন তিনি৷ ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ৫টি ছক্কা হাঁকান ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার৷ একসময় দু’শ’র ঘরে ঢোকা অনিশ্চিত দেখানো নাইট রাইডার্স নির্ধারিত ২০ ওভারে পৌঁছে যায় ৪ উইকেটে ২১৮ রানে৷

কেকেআরের গড়া রানের পাহাড়ে চড়া শেষমেশ সম্ভব হয়নি পঞ্জাবের পক্ষে৷ ভালো ব্যাটিং করেও তাদের থেমে যেতে হয় ৪ উইকেটে ১৯০ রানে৷ ২৮ জনের ব্যবধানে ম্যাচ যেতে নাইট রাইডার্স৷

ম্যাচের শেষে অশ্বিন নিজেও স্বীকার করে নেন ভুলটা৷ পাঞ্জাব অধিনায়ক বলেন, ‘এটা নিতান্তই ছোট একটা ভুল৷ তবে টি-২০ ক্রিকেটে এমন ছোট ভুলই বড় হয়ে দেখা দিতে পারে৷ ঠিক সেটাই হয়েছে এই ম্যাচে৷ ভবিষ্যতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এমন ভুল যাতে আর না হয়৷’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top