শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়ার প্রতিবাদে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার সকাল থেকে অ্যাকাডেমিক ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। দিনভর উত্তাল আন্দোলনের কারণে বুধবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পাঁচ দফা হচ্ছে- ছাত্র সংসদ চালু, পরীক্ষা বর্জন করলে ফের পরীক্ষা নেয়ার জন্য কোনো জরিমানা না করা, এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হস্তান্তর করা, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের সংখ্যা বাড়ানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ওভারব্রিজ তৈরি করা।
এর আগে শিক্ষার্থীদের ছাড়াই মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতিবাদে সকালে হলের খাবার বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সময়ও তারা ৫ দফা দাবি পেশ করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝেই স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে ভিসির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ দেয়। সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি না মানা হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের আল্টিমেটাম দেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ক্যাম্পাসে। কিন্ত ফুল দেয়া ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠানে (মধ্যাহ্নভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে ২৬ মার্চ দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) একটি প্রোগ্রামে ভিসি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করেন।
এ বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে আরো ক্ষোভের সৃষ্টি করলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি ভিসির বক্তব্য প্রত্যাহার না করা হলে এবং পাঁচ দফা দাবি মানা না হলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী আন্দোলন চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমামুল হক জানান, ‘বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানমালা রয়েছে। এমনকি স্বাধীনতা দিবসেও তাদের আলাদা কর্মসূচি রয়েছে। বছরে শুধুমাত্র বিশেষ এসব দিনেই ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, বরিশালের বিশিষ্টজন এবং সাংবাদিকদের চা-চক্রের আমন্ত্রণ দেয়া হয়ে থাকে। এখানে ছাত্রদের কখনই রাখা হয় না। হঠাৎই এ বছর এমন করছে তারা। তাদের না রাখা হলে অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।’
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (বিইউডিএস) অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চায় না, যারা এভাবে কথা বলে তাদের আমি কি বলে আখ্যায়িত করবো? তাদের স্বাধীনতার পক্ষে বলে তো মনে হয় না। তাদের ব্যবহার রাজাকারের মতোই।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে ড. ইনামুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমি কীভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো মুক্তিযোদ্ধারও অনেক সন্তান রয়েছে। আমার কথা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর কারণও ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মেয়াদ রয়েছে আর দুই মাস। আবার যদি আমাকে এখানে ভিসি নিয়োগ করা হয়- সে ভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখানোর চেষ্টা চলছে। আমি থাকলে অনেকে বিপদে পড়ে যেতে পারেন।’