মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যাকব শাপিরো বলেছেন, তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আর অন্ধভাবে অনুসরণ করবে না। তিনি বলেন, তুরস্ক পরিবর্তিত হয়েছে। এখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের এমন সহযোগী হতে চাচ্ছে না যে বিনাবাক্যে তার কথায় চলবে। দেশটির নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে, যা অর্জনে সে চেষ্টা করবে। তবে তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক ভাঙার কোনো সম্ভাবনা নেই। এক নিবন্ধে তিনি এ বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।
জ্যাকব শাপিরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনালিস্ট ফর জিওপলিটিক্যাল ফিউচারের (জিএফপি) ডিরেক্টর। তিনি তার অঞ্চলে তুরস্কের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং রাশিয়ার এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার তুরস্কের সিদ্ধান্তের উপর আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মূল্যায়ন করেন।
তিনি বলেন, ‘আগ্রহের জায়গাগুলোতে কখনো কখনো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের স্বার্থের মিল হবে। আবার কখনো কখনো তাদের মিল হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৭ সালে তুরস্ক রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। আরো একটি পরিকল্পনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়। বতমানে তুর্কি পাইলটরা আরিজোনাতে লুক এয়ারফোর্স বেসে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অন্যদের মধ্যে তুর্কি সংস্থাগুলো এফ-৩৫ প্রোগ্রাম একাংশ সরবরাহ করে। যার মধ্যে রয়েছে এয়ারফ্রেম কাঠামো, এসেমব্লিং ও সেন্টার ফিউজলাগস। ওয়াশিংটন সতর্ক করে দিয়েছিল যে, এস-৪০০ জেটগুলোর শনাক্তপাল্লার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে, যা তখন রাশিয়া হস্তগত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভাঙবে না
শাপিরো বলেন, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট পাওয়ার প্রতিযোগিতার তালিকায় রাশিয়া এক দেশ, তবুও তুরস্ক তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে মুক্ত। তুরস্ক নিজেই রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে। আমি মনে করি তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভাঙবে না। তবে আমরা তুরস্ককে তার উচ্চকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে সেই সম্পর্কটি সঙ্গায়িত করে দেখি এবং এটিই স্বাভাবিক।
জিপিএফ বিশ্লেষণ মতে, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র একটি উপসর্গ, কারণ নয়। তুরস্ক এটি দেখাচ্ছে যে, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক গড়তে পারে। শাপিরো বলেন, তুরস্ককে রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করা বাধ্যতামূলক নয়। তুরস্ক স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, এটি তার এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখায় যুক্তরাষ্ট্র আরো নিচু হবে বলে আমি মনে করি। এটি ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুর্কি সম্পর্কের দুর্বলতার কারণে ইউএস যাজক অ্যান্ড্রু ব্রুনসনের আটক করাটা ছিল এক বড় টার্নিং পয়েন্ট। ২০১৬ সালের ব্রুনসনকে গ্রেফতার করা হয়। সে বছরের প্রথম দিকে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে ফতুল্লাহ সন্ত্রাসী সংগঠনের (ফেটো) সাথে তার সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ আনা হয়। তাকে তিন বছরের বেশি কারাগারে আটক রাখা হয়। পরে তাকে গৃহবন্দী রাখা হয়। ভালো আচরণের কারণে পরে মুক্তি দেয়া হয়।
ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ
তুরস্কের স্বল্পমেয়াদি আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাপিরো আরো অবিশ্বাসের পূর্বাভাস দেন। তিনি বলেন, সিরিয়ার সমস্যা এখনই সমাধান হচ্ছে না। কুর্দি ইস্যুও চলে যাচ্ছে না। ইরানকে তার ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। তুরস্ক তার প্রভাবের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। ক্ষমতা নিয়ে তুরস্কের শক্তি ইরানের চেয়ে আরো গভীরতর। ইরান একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এবং ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তুরস্ককে অবশেষে নিশ্চিত করতে হবে যে, ইরান খুব বেশি দূরে যাবে না।
সূত্র : আনাদোলা