অভ্যুত্থান চক্রান্ত : বিদায় নিচ্ছেন থেরেসা মে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মন্ত্রিসভার একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যুত্থান চক্রান্তের সম্মুখীন হয়েছেন। তার মন্ত্রিসভার ১১ জন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা তার পদত্যাগ চান। টাইমসের রাজনৈতিক সম্পাদক এ কথা বলেছেন। টিম শিপম্যান রোববার বলেন, ‘আজ রাত থেকে থেকে উৎখাত করতে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ অভ্যুত্থান চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাকে ১০ দিনের মধ্যে তাকে বিদায় নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মের ডি-ফ্যাক্টো সহকারী ডেভিড লাইডিংটন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে অন্যরা পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গভ অথবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমি হান্টকে এ দায়িত্ব দেয়ার পক্ষে।’

জানা গেছে, থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেই ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের সিনিয়র নেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে পরবর্তী দফা আলোচনার নেতৃত্বে থেরেসা থাকছেন না বলে জানালে অনিচ্ছা সত্ত্বেও টোরি এমপিরা ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোতে এমন খবরের মধ্যেই রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের এ মনোভাবের কথা জানা গেল।

তবে থেরেসা মেকে সরে দাঁড়াতে প্ররোচিত করা হচ্ছে বলে যেসব খবর প্রচারিত হচ্ছে সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়াবিষয়ক আর্টিকেল-৫০ এর মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য হওয়া মে সপ্তাহখানেক ধরেই পদত্যাগের চাপের মুখে আছেন। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় তার সমালোচনাও করছেন এমপিরা। ইইউ নেতাদের সাথে হওয়া সমঝোতা চুক্তিটি থেরেসা আগামী সপ্তাহে ফের পার্লামেন্টে ভোটে তুলবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী থেরেসা এমপিদের কাছে লেখা এক চিঠিতে ‘প্রয়োজনীয় সমর্থন’ পেলেই কেবল চুক্তিটি ফের উত্থাপন করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রোববার যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে মন্ত্রিসভার সদস্যরা মে-কে সরিয়ে একজন ‘তত্ত্বাবধায়ক নেতাকে’ দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানানো হয়েছে। এ বছরের শেষে নতুন নেতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ওই ‘তত্ত্বাবধায়ক’-ই সব দেখভাল করবেন বলেও ভাবছেন তারা। থেরেসার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, তা নিয়েও টোরিদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে বলেও খবরগুলোতে বলা হয়েছে। এদের মধ্যে থেরেসার ডি-ফ্যাক্টো সহকারী ডেভিড লাইডিংটনই এগিয়ে আছেন বলে জানিয়েছে সানডে টাইমস। লাইডিংটন ব্রিটেনকে ইইউয়ের ভেতরে রাখার পক্ষে ছিলেন। আর দ্য মেইল বলছে, ব্রেক্সিটপন্থী পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গোভই থেরেসার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ‘সবার পছন্দ’।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী সরে দাঁড়ালেই যে তার ব্রেক্সিট চুক্তি প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা নেই বলে মন্তব্য করেছেন টোরি দলের এক সিনিয়র ব্যাকবেঞ্চার। থেরেসাকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হতে পারে কিংবা তিনি সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে কিছু ‘কাজ ভাগাভাগি’ করতে পারেন এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট। আগামী দিনগুলোতে থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তির পাশাপাশি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আরো ছয়টি বিকল্পের ওপর ভোট হতে পারে। এ বিকল্পগুলো হচ্ছেÑ আর্টিকেল ৫০ প্রত্যাহার করে ব্রেক্সিট বাতিল করা, আরো একটি গণভোট করা, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সাথে একটি কাস্টমস ইউনিয়ন যুক্ত করা, প্রধানমন্ত্রীর চুক্তির সাথে কাস্টমস ইউনিয়ন ও সিঙ্গেল মার্কেট অ্যাকসেস প্রতিষ্ঠা, কানাডার মতো অবাধ বাণিজ্য চুক্তি ও চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ।

ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি গণভোটের দাবিতে শনিবারও সেন্ট্রাল লন্ডনে লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ‘সবচেয়ে ভালো চুক্তি ব্রেক্সিট না হওয়া’, ‘আমরা একটি গণভোটের দাবি করছি’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড। মিছিলে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে বলে আয়োজকেরা দাবি করেছেন। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে মিছিলের সাথে একাত্মতাও জানিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top