মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। কুটনৈতিক পল্লীসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতরস্থান সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জানা যায়, আকস্মিক ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় ২৪ ঘন্টার রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশব্যাপী জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থেকেই স্পর্শকাতরস্থান সমূহের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে বাংলাদেশে কর্মরত একাধিক বিদেশি কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেও রেড অ্যালার্টের তথ্যের বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তথ্যসূত্র বলছে, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দু’বছর পেরিয়ে গেছে। হামলার পর গত দু’বছরে দেশব্যাপী একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নব্যধারার (নব্য জেএমবি) শীর্ষ নেতাসহ অন্তত ৭০ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
রেড অ্যালার্টের বিষয়ে পুলিশের ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি জোনের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আমরা একটু সিকিউরিটি টাইট করছি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে। এছাড়া আমরা এমনিতেই মাঝে মধ্যে সিকিউরিটি টাইট করি, একটু বেশি অ্যালার্ট থাকি। এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। আমরা অ্যালার্ট আছি। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষেও রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশ হবে- লোক সমাগম হবে। সেটা মাথায় রেখেই আমরা রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করেছি। তিনি বলেন, কোনো অপশক্তি রাজধানীতে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। জঙ্গিরা একের পর এক পুলিশী অভিযানে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ফেসবুকে ও অনলাইনে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
গুলশান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২৪ ঘন্টার জন্য গুলশান-বারিধারার কূটনৈতিক জোন-এ রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে এলাকাটি। এখানে অবস্থিত বিভিন্ন ক্লাব সদস্যদের মোবাইলে মেসেজ দিয়েও সদস্যদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে ফলে বিকেলের দিকে জানজট তৈরি হলেও সন্ধ্যা নাগাদ এলাকা নীরব হয়ে পড়েছে, সাধারণ লোকজন ও যানবাহন চলাচল অন্য দিনের তুলনায় কম দেখা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে যারা অফিস ফেরত পথচারী তারা পরিবহন সংকটে বাড়ি ফেরায় অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকদের নিজ আবাসস্থল থেকে উন্মুক্ত লোকালয়ে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি মাসুদ বলেন, সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো কিছু না ঘটে। তার মানে এই নয় যে, থ্রেট আছে। সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কাজ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, নিউজিল্যান্ডে হামলার পর এমনিতেই কূটনৈতিক পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার ছিল। ২৬ মার্চ উপলক্ষে সেই নিরাপত্তার সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর অন্যান্য স্থানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য , হলি আর্টিজানে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হামলার পর পুলিশ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নামলে জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে যায়। গত আড়াই বছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কমপক্ষে অর্ধশত সফল অভিযান পরিচালনা করে। এতে জঙ্গিরা অনেকটাই নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সম্প্রতি জঙ্গিরা আবারো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে হিজবুত তাহরির রাষ্ট্রবিরোধী ও বিভিন্ন উস্কানীমূলক বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট বিলি ও দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসেছে।