সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের গাড়ি আটকে দিয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা (সিকৃবি)। রোববার সিলেট নগরের চৌহাট্টা মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। গাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য দুই আওয়ামী লীগ নেতার অনুরোধ সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা শোনেননি। ঠিক এই অবস্থায় সাবেক অর্থমন্ত্রী দুই আওয়ামী লীগ কর্মীর হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে আসেন।
শনিবার সিকৃবি শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে বাস থেকে ফেলে হত্যার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছে তার সহপাঠীরা। বেগতিক অবস্থা দেখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমি শুনেছি শনিবার একটি বাসের চালক ও হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে এক শিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়। এতে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এটি নিশ্চিত একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন আদালত। তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। আদালতকে আমাদের কোনো নির্দেশ দেয়া উচিত নয়। তোমরা (শিক্ষার্থীরা) জানো, আদালতের কাজে আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আদালতের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা আমাদের কাজ নয়। কাজেই বিশ্বাস রাখো, এসব অপরাধীর বিচার করবেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, আমার মতে রোববারের ঘটনা একটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন আদালতকে তার সঠিক কাজটি করার সুযোগ দিতে হবে। আমি তোমাদের দলে, তোমাদের সব দাবির সাথে একমত। আমিও এসব দাবির বাস্তবায়ন চাই, নিরাপদ সড়ক চাই। কেউ সড়কে মারা যাক আমরা চাই না।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থী ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদে নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধে চৌহাট্টার চারদিকে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চৌহাট্টায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের গাড়ি পৌঁছালে অবরোধের মুখে পড়ে। এ সময় মুহিতের গাড়ি দেখেও রাস্তা ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা।
পরে মুহিতের গাড়ি থেকে নেমে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থানে ছিলেন অনড়। তারা ওয়াসিম হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ তুলবেন না, কোনো গাড়ি ছাড়বেন না বলে জানান।
এ অবস্থায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের গাড়ির পেছনে থাকা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ গাড়ি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মুহিতের গাড়ি ছাড়তে অনুরোধ জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো কথাই শোনেননি। তাদের দাবি একটাই, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
শেষ পর্যন্ত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দেন। পরবর্তীতে মুহিতের গাড়ি ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।