মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ ওয়াসিম আফনানকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাকায় পিষ্ট করে হত্যাকারী ঘাতক বাস উদার পরিবহনের চালক জুয়েল আহমদ (৩১) ও হেলপার মাসুক মিয়াকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত দুজনকে জেল হাজতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে মৌলভীবাজার মডেল থানার পুলিশ।
ঘটনার দিন শনিবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার উদার পরিবহনের বাসচালক জুয়েল আহমদ ও রাত ২টার দিকে হেলপার মাসুককে পৃথক স্থান থেকে আটক করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনা স্বীকার করেছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ারুল হক জানান, স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আটক করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
ঘাতক বাসচালক ও হেলপারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে নবীগঞ্জের টোলপ্লাজা থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে উদার পরিবহনের (ঢাকা-মেট্রো-১৪-১২৮০) বাসে ওঠেন সিকৃবির কয়েকজন ছাত্র। এ সময় হেলপার মাসুক মিয়া তাদের কাছে ১০০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। এতে ওয়াসিম ও তার বন্ধুরা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ভাড়া কম দেয়ার কথা জানান। এতে হেলপার ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
একপর্যায়ে তারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে যান। নামার সময় পেছন থেকে হেলপার তাদের গালি দেন। এতে ওয়াসিম বাসের সিঁড়িতে উঠে হাতল ধরে কেন গালি দিলেন তা জিজ্ঞেস করতেই চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। ঠিক তখনই হেলপার মাসুক মিয়া ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ওয়াসিম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বাস চাপায় নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মোঃ ওয়াসিম আফনান ঘোড়ির লাশ রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে নবীগঞ্জের দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে নিহত ওয়াসিমের জানাযায় অংশগ্রহণ করেন নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের এমপি গাজী শাহ নেওয়াজ মিলাদ (মিলাদ গাজী) ও ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাবেদ আলী প্রমুখ।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্র ওয়াসিম আফনান ঘোড়ি (২১) তার বন্ধুদের সাথে নবীগঞ্জ থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য উদার পরিবহনের বাসে উঠেন। পথিমধ্যে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা সকলেই শেরপুর নামক স্থানে নেমে যাচ্ছিলেন।
এমন সময় চালকের সহকারী (হেলপার) তাদের গালমন্দ করলে ওসাসিম আবার এই বাসে উঠে গালমন্দের কারণ জানতে চান। এসময় হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেন তার বন্ধুরা। এসময় বাস চালানো শুরু করলে বাসের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারাত্মক আহত হন ওয়াসিম। পরে আহত অবস্থায় তার বন্ধুরা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ঘটনাস্থল মৌলভীবাজারে আসেন পুলিশের সিলেট বিভাগের ডিআইজি কামরুল ইসলাম, হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রেঞ্জের ডিআইজি আতিকুর রহমান, হাইওয়ে পুলিশের এসপি শফিকুল ইসলাম। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সুহেল আহমদ জানান, উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তৎপর রয়েছি। আটক আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে নিহত ওয়াসিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানান তিনি।