ভর্তুকিই ৪২ হাজার কোটি টাকা

আগামী অর্থবছরে শুধু ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতেই ব্যয় করতে হবে ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির দেড় শতাংশ। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় করা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেশি ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি গুনতে হবে বিদ্যুৎ খাতে। এ খাতে ভর্তুকির প্রস্তাব করা হচ্ছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এ বড় অংশটি যাবে বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা খাতে কী পরিমাণ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে তার একটি বাজেট তৈরি করা হয়েছে। এতে এ তিনটি খাতে যে ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে ভর্তুকি খাতে ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, প্রণোদনা খাতে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং নগদ সহায়তা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার পরই রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে প্রণোদনা দেয়ার জন্য বরাদ্দ থাকছে ৯ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য খাতে ভর্তুকি থাকছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে। রফতানি খাতে নগদ সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও পাটজাত দ্রব্যাদি খাতে প্রণোদনা দেয়া হবে ৫০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গেল পাঁচ বছর ধরে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (বিপিসি) আমরা কোনো ভর্তুকি দিচ্ছি না। এর আগে ভর্তুকির সবচেয়ে বড় অংশটি বিপিসিকে দেয়া হতো। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে এনে বিপিসিকে এখানে কম দামে বিক্রি করতে হতো।

এর ফলে ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছর সরকারি এ প্রতিষ্ঠানকে বেশ মোটা অঙ্কের ভর্তুকি হিসেবে অর্থ দিতে হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল কম দামে কিনে বিপিসি এখানে তা বেশি দামে বিক্রি করছে এবং মুনাফাও করছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে এখন আর কোনো আর্থিক সহায়তা দিতে হচ্ছে না। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এর একটি বড় অংশ যাচ্ছে বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। আর একটি যাবে এলএনজি আমদানি খাতে। ফলে আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা থাকছে।

এ দিকে চলতি অর্থবছরে যে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি খাতে রাখা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরপরই কৃষি খাতে রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ।

তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকি ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top