দিনে দুই পিস ইয়াবা লাগত সিরাজের। সকালে আর রাতে। ইয়াবা না খেয়ে উঠলে গাড়ি চালাতে পারে না সে। সুযোগ পেলে অন্যান্য নেশাও ছাড়ে না। বসে বসেই এই ইয়াবা পেয়ে যায়। সকালে সদরঘাটে এলেই হাতে চলে আসে ইয়াবা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরারের ঘাতক সুপ্রভাত বাসচালক সিরাজুল ইসলামের এক সহকর্মীর কথা এগুলো। যে কারণে সিরাজ অনেকটাই বেপরোয়া। রাস্তায় তার সামনে কোনো গাড়ি দেখলে সিরাজের মাথা নষ্ট হয়ে যেতো কিভাবে ওভারটেক করবে!
গত ১৯ মার্চ সকাল ৭টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রগতি সরণি এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) চাপা দিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নামের এক পথচারীকে হত্যা করে। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। রাজধানীর বাইরেও এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ এবং ২০ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বের হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এ দিকে চালক সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর ২০ মার্চ তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। আদালত তার ব্যাপারে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রথমে তাকে গুলশান থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র বলেছে, রিমান্ডে সিরাজুলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে তার বাস চালানোর কোনো লাইসেন্স ছিল না। মোটরসাইকেল চালানোর একটি লাইসেন্স দিয়ে সে বাস চালাত।
তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মোটরসাইকেল চালানোর যে লাইসেন্সটি সিরাজুলের ছিল তাও প্রকৃত লাইসেন্স নয়। এই নকল লাইসেন্স দেখিয়েই সে বাস চালিয়ে আসছিল। ঘটনার পর ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও সাংবাদিকদের বলছিলেন, চালক সিরাজুল ইসলামের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। হালকা যান চালানোর লাইসেন্স নিয়ে তিনি বাসের মতো ভারী যান চালাচ্ছিলেন।
সুপ্রভাত গাড়িটি রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাতায়াত করত। সদরঘাট এলাকায় গিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায় সিরাজুল একজন ইয়াবাসেবী। দিনে তার দুই পিস ইয়াবা না হলে চলত না। সকালে আর রাতে সে ইয়াবা সেবন করত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদরঘাটের এক পরিবহন শ্রমিক জানান, এসব গাড়ির যারা ড্রাইভার তাদের টাকার অভাব হয় না। বেতনের বাইরেও প্রতিদিন গড়ে এক-দেড় হাজার টাকা আয় রয়েছে। সেই টাকার অধিকাংশই চলে যায় নেশার পেছনে। ওই শ্রমিক বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই নেশা করেন। নেশার বস্তু তাদের হাতের নাগালে।
অপর এক শ্রমিক বলেন, সামনে কোনো গাড়ি দেখলে সিরাজুলের মাথায় যেন রক্ত উঠত। যেকোনোভাবেই হোক সেই গাড়িকে পেছনে ফেলতে হবে। তার মধ্যে সব সময়ই একটা বেপরোয়াভাব ছিল। আবরারকে চাপা দেয়ার ঠিক মিনিটখানেক আগে সিরাজুল এক তরুণীকে চাপা দেয়।
গুলশান থানার ওসি বলেছেন, সিরাজুল নেশা করত কিনা তা জানতে টেস্ট করতে হবে। তিনি বলেন, সিরাজুলকে এখন মহানগর ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।