জ্যোতিষীর রাশিফলে বিশ্বাস করা শিরকের শামিল। সে মানুষের গায়েব জানে না। কারণ সে একজন মানুষ এবং আল্লাহর সৃষ্টি। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই মানুষের আগে ও পেছনের সবকিছু জানেন। জ্যোতিষীর রাশিফলে বিশ্বাস করা মানে আল্লাহ আলিমুল গায়েব নামের সাথে শিরক করা। অর্থাৎ আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ গায়েব জানেন এবং জ্যোতিষীও গায়েব জানে। তার মানে আল্লাহর সাথে জ্যোতিষীকে শিরক করলেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। জলে-স্থলে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তাঁর অজ্ঞাতসারে গাছের একটি পাতাও পড়ে না। মৃত্তিকার অন্ধকার প্রদেশে এমন শস্যকণাও নেই যে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শুষ্ক ও আদ্র সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিখিত আছে।’ (সূরা আনআম : ৫৯)
আল্লাহই আলিমুল গায়িব সব প্রকার অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞান তিনি রাখেন। মানুষের মনের অন্ধকার কুঠুরিতে কি আছে, আল্লাহর কাছে তা দিবালোকের মতোই সুস্পষ্ট। কারণ তিনি আল্লামুল গুয়ুব। আল্লাহ মহাজ্ঞানী ও মহাবিজ্ঞ। আয়াতুল কুরসিতে বলা হয়েছে- ‘কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত।’ (সূরা বাকারা : ২৫৫) মানুষ, জিন, ফেরেশতা বা অন্য কোনো সৃষ্টিই হোক না কেন, সবার জ্ঞান অপূর্ণ ও সীমিত। বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপনা এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যকারণ ও ফলাফল বোঝার মতো জ্ঞান কারো নেই। বিশ্ব জাহানের সমগ্র সত্য ও রহস্য কারো দৃষ্টি সীমার মধ্যে নেই। বিশ্ব-জাহানের প্রভুু ও পরিচালক মহান আল্লাহই পুরোপুরি জ্ঞান রাখেন। সব ক্ষেত্রে জ্ঞানের মূল উৎস মহান আল্লাহর হিদায়াত ও পথনির্দেশনার ওপর আস্থা স্থাপন করা ছাড়া মানুষের জন্য দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই।
আল্লাহ বলেন, ‘তাদেরকে বলো, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে।’ (সূরা আন নামল : ৬৫) উল্লিখিত আয়াতের পূর্ব থেকে আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম, ব্যবস্থাপনা ও জীবিকা দানের দিকে দিয়ে এই মর্মে যুক্তি পেশ করা হয়েছে যে, আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। এবার আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ জ্ঞানের দিক দিয়ে জানানো হচ্ছে, এ ব্যাপারেও মহান আল্লাহ হচ্ছেন লা-শারিক। পৃথিবী ও আকাশে ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া অথবা মানুষ ও অমানুষ যেকোনো সৃষ্টি হোক না কেন, সবারই জ্ঞান সীমাবদ্ধ। সব কিছুর জ্ঞান যদি কারো থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। এ বিশ্ব জাহানের কোনো জিনিস এবং কোনো কথা তাঁর কাছে গোপন নেই। তিনি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব কিছু জানেন।
এখানে গায়েব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। গায়েব মানে প্রচ্ছন্ন লুকানো অদৃশ্য বা আবৃত। পারিভার্ষিক অর্থে গায়েব হচ্ছে এমন জিনিস যা অজানা এবং যাকে জানার উপায়-উপকরণগুলো দ্বারা আয়ত্ত করা যায় না। দুনিয়ার এমন বহু জিনিস আছে যা এককভাবে কোনো কোনো লোক জানে এবং কোনো কোনো লোক জানে না। আবার এমন অনেক জিনিস আছে যা সামগ্রিকভাবে সমগ্র মানব জাতি কখনো জানত না, আজকেও জানে না এবং ভবিষ্যতেও জানার সম্ভাবনা নেই। জিন, ফেরেশতা ও অন্যান্য সৃষ্টির ব্যাপারেও এই একই কথা। তিনি হচ্ছেন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ। তাঁর কাছে প্রচ্ছন্ন, অদৃশ্য বা ভাসাভাসা জ্ঞান বলতে কোনো কিছু নেই। সবই তাঁর কাছে সুস্পষ্টভাবে পরিদৃশ্যমান।
জ্যোতিষী যতই যুক্তি বা শাস্ত্রের কথা বলুক তাদের এগুলো বিশ্বাস করলে আল্লাহর সাথে শিরক করা হবে। এ জন্য আল্লাহর রাসূল সা: জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা গণকের কাছে গেল এবং সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, মুহাম্মদের কাছে যা নাজিল হয়েছিল সে তা অবিশ্বাস করল।’ ( সুনানে আবু দাউদ : ৩৮৯৫)
হাফসা রা: কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে গণকের কাছে যায় এবং কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার ৪০ দিন ও রাত্রির নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না। (সহিহ মুসলিম : ৫৫৪০)
জ্যোতিষী তো দূরের কথা আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সা: দিয়ে কি বলিয়েছে লক্ষ করুন- ‘(হে মুহাম্মদ) তুমি বলো, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমার নিজের ভালো-মন্দের ওপরও আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের খবর বা গায়েব জানতাম তবে তো আমি প্রভুত কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোনো অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সর্তককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র।’ (সূরা আরাফ : ১৮৮)
সুতরাং জ্যোতিষী বা গণকের কাছে যাওয়া, তার কথা শোনা ও বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরির অন্তর্ভুক্ত। এদের কাছে কখনো যাবেন না।
লেখক : ব্যাংকার