দেশের সাত কোটি মানুষ সুপেয় পানি বঞ্চিত

চার দিকে পানি আর পানির দেখা মিললেও আসলে এগুলো সুপেয় না। সুপেয় পানির বড় সঙ্কট চলছে দেশে। দেশের মাত্র ৫৬ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানির আওতায় আছে। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া এলাকাতে সুপেয় পানির সঙ্কট প্রচণ্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা অসম্ভব। সে জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশে সুপেয় পানির প্রাপ্যতায় ঘাটতি রয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ পানির সুবিধা পাচ্ছে না। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালনায় জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রামের আওতায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের সাত কোটির অধিক মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। আন্তর্জাতিক এনজিও সিমাভির দেশীয় সমন্বয়ক অলোক মজুমদার নয়া দিগন্তকে জানান এ সাত কোটি মানুষ পানি সুপেয় পানি পাচ্ছে না, কারণ তারা বিভিন্ন দূষিত উৎস থেকে তা পাচ্ছে। প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, দেশের পানির উৎসের প্রায় ৪৪ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে দূষিত। পানির উৎস হয় ইকোলাইয়ে নয়তোবা আর্সেনিকে দূষিত।

এমনই বাস্তবতায় এবারে পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। যার মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘Leaving no one behind’ কাউকে বাদ না দিয়ে অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সভা-সেমিনারসহ র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বিশ্ব পানি দিবসের বাণীতে বলেছেন, ফসল উৎপাদনে সেচকাজে পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানের কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার ‘বিশ্ব পানি দিবস’ পালিত হতে যাচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পানি ও কৃষি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব পানি দিবসে তার বাণীতে বলেন, জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে কৃষি, শিল্পসহ সব ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২২ মার্চ ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০১৯’ পালন করা হচ্ছে জেনে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন ও পরিবেশের মৌলিক উপাদান পানি। কৃষি, শিল্প, মৎস্য ও পশুপালন, নৌচলাচল, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য পানির ওপর নির্ভরশীল।

বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত এলাকার মধ্যে রযেছে দেশের দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া ৬টি অঞ্চল। এগুলো হচ্ছে বরেন্দ্র, বিল, চর, উপকূলীয় হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চল। দেশের ১১৪৪টি ইউনিয়নকে দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানির সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে একটা কৌশল পত্র তৈরি করে।

এ দুর্গম এলাকাগুলোতে প্রায় ৩ কোটি লোকের বসবাস। কৌশল পত্র তৈরি হওয়ার পর সরকারের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে কিন্তু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এখনো সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্গম এলাকায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে বাধা হচ্ছে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়।
এ দিকে সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পানি ও স্যানিটেশন খাতে বরাদ্দের প্রয় ৮১ ভাগ দেয়া হয় শহরে এবং মাত্র ১৯ ভাগ যায় গ্রামাঞ্চলে। দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া এলাকার বেশির ভাগ হলো গ্রামাঞ্চলে। গ্রাম ও শহরের অর্থ বরাদ্দের বৈষম্য না কমালে সবার জন্য সুপেয় পানি সম্ভব নয়।

এ ছাড়া এমনিতেও দেশে পানি সঙ্কট দেখা দেয় গ্রীষ্মে। সে সময় দূষণমুক্ত পানির প্রাপ্যতা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ধাকে। অন্য দিকে বৈশ্বিকভাবে ৮০ ভাগ পানি দূষিত হয়ে পরিবেশে চলে যাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১৮ বিলিয়ন মানুষ দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ৬৬৩ মিলিয়ন মানুষের কোনো নির্দিষ্ট পানির উৎস নেই। সারা বিশ্বের প্রায় ৮৪৪ মিলিয়ন মানুষ বেসিক লেভেল পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top