ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। নির্যাতিত শিশুর নাম সজিব। আর নির্মমভাবে শিশু নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক চৌধুরী বাবলু। তিনি উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি স্থানীয় চান্দুরা ইউপি চেয়ারম্যান ও বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামিউল হক চৌধুরী আত্মীয় বলে জানা গেছে।
এদিকে শিশু নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক। পাশাপাশি এই ঘটনায় বিজয়নগর থানা পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক। ধারণা করা হচ্ছে- এই ঘটনার সাথে সরকার দলীয় নেতা জড়িত থাকায় পুলিশের কোনো অগ্রগতি নেই।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে চান্দুরা ইউনিয়নের আমতলি দক্ষিণ বাজারে সজিব (৮) নামে এক শিশুকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু। নির্যাতিত শিশু সজিব একই ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামের রেজেক মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলি দক্ষিণ বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা বাবলুর কাঠের দোকানে রড দিয়ে একটি কাঠে খেলাচ্ছলে আঘাত করে সজিব। পরে বাবলু সজিবকে ধরে মারধর শুরু করে। ঘটনার সময় অনেকেই শিশু সজিবকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলেও বাঁধা দেন বাবলু। নির্যাতনের সময় বাবলু শিশু সজিবকে থাপ্পড় দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যান। ইতোমধ্যে সজিবকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে সজিবকে নির্যাতনকারীর পায়ে ধরে ‘আমি কিছু করিনি’ বলে আকুতি জানাতে দেখা গেছে। কিন্তু বাবলু সেই আকুতি না শুনে সজিবকে নির্যাতন করতে থাকেন। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়ে সজিব।
নির্যাতিত সজিবের মা জরিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে লাকড়ি আনার জন্য বাজারে গিয়েছিল। পরে বাবলুর দোকানের সামনে বসে থাকার সময় গাছের ছাল তোলার অভিযোগে তাকে গলা টিপে ধরে মারধর করেন বাবলু। এরপর সজিবকে টেনে-হিঁচড়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে নির্যাতন করে। অনেক মানুষ এসে বাবলুকে অনুরোধ করলেও সজিবকে তিনি ছাড়েননি।
তিনি আরো বলেন, আমি খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পর বাবলু আমার কাছে গাছের ছাল তোলার জন্য দুই লাখ টাকা ‘জরিমানা দাবি’ করেন, না হলে সজিবকে মেরে দুই লাখ টাকা দিয়ে দিলেও তার কিছু হবে না বলে আমাকে হুমকি দেন। নির্যাতনের বিষয়ে কথা না বলতে- আমি ও আমার পরিবারকে নানানভাবে চাপ প্রয়োগ করছে বাবলু।
এদিকে শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক চৌধুরী বাবলুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় চান্দুরা ইউপি চেয়ারম্যান ও বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামিউল হক চৌধুরী জানান, এসব গুজব বিএনপির লোকজন ছড়াচ্ছে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রেজাউল করিম বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানায় অভিযোগ না করার জন্য শিশুটির পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, আপনারা এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।