বেশ কয়েক বছর ধরেই বিপদে আছেন ভারতের কৃষকরা। ঋণের বোঝা, উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়াসহ হাজারো রকমের সমস্যায় জর্জরিত দেশটির কৃষক সমাজ। তাই প্রতিবছরই কয়েক হাজার কৃষক আত্মহত্যা করছেন দেশটিতে।
এবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই আত্মহত্যার অনুমতি চাইলেন উত্তরপ্রদেশের আগ্রার একজন কৃষক। প্রধানমন্ত্রীর কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের দুই হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে ৩৯ বছরের কৃষক প্রদীপ শর্মা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে লেখা এক চিঠিতে জানান, দয়ার দান চাই না, আত্মহত্যার অনুমতি দিন। আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না।
এমনিতেই উত্তর প্রদেশের আগ্রা, হাথারাস ও মথুরা এলাকায় আলু চাষ করা খুবই কঠিন। অথচ রাজ্যের এখানেই সবচেয়ে বেশি আলু হয়। কিন্তু এবার আলু তোলার পর প্রতি কেজি আলুর দাম নেমে আসে মাত্র দুই রুপিতে। ফলে বাম্পর ফলন হওয়া সত্ত্বেও মুখে হাসি ফুটেনি আলুচাষিদের।
উত্তরপ্রদেশের এ আলুচাষি তার চিঠিতে জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে নেয়া তার ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এই ঋণ শোধ করা কখনই সম্ভব নয় তার। এখন মুখ্যমন্ত্রী তাকে আত্মহত্যার অনুমতি দিলে তিনি বেঁচে যাবেন।
প্রদীপ জানান, খুব পরিশ্রম করেও নিজের ও তার পরিবার দৈনিক খাবারে ব্যবস্থাটুকুও করতে পারছেন না তিনি। এর আগেও তিনি জেলাশাসককেও চিঠি লিখে ছিলেন। ২০১৬ সালে শস্যের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরে সরকারের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন প্রদীপ। কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি সে চিঠির।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দিল্লি দিয়েছিলেন প্রদীপ। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। সেই সময় ঋণ শোধ করতে না পারার চিন্তায় তার চাচাও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাই বাধ্য হয়েই আত্মহত্যার পথই বেছে নিতে চাইছেন তিনি।
প্রকল্পের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে প্রদীপ জানান. সরকারি প্রকল্পের দু’ হাজার টাকা তার কোনো কাজে আসবে না, তাই মুখ্যমন্ত্রীকে সেই টাকা ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
ফলন ভাল হলেও প্রায় প্রতি বছরই ফসলের দাম না পেয়ে হতাশ হতে হয় ভারতের চাষিদের। মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। অথচ সরকার সেসব নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভও কম হয়নি। চাষিদের সেই চিরাচরিত ছবিই আরও একবার সামনে নিয়ে এলেন এবং প্রতিবাদ করলেন প্রদীপ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পেঁয়াজ বিক্রির টাকা পাঠিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেছিলেন মহারাষ্ট্রের কৃষক সঞ্জয় শেট্টি সঞ্জয় বলেছিলেন, ফলন ভালই হয়েছিল। কিন্তু দাম পাইনি। স্থানীয় নিফাদ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি এক টাকা দর দেয় ব্যাপারীরা। শেষ পর্যন্ত এক টাকা চল্লিশ পয়সা দরে রফা হয়। পরে ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে হাতে পাই মাত্র ১০৬৪ টাকা। সেই টাকাই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে।