একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক

দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতিটিকে যেভাবে সামাল দিয়েছেন তাতে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের প্রশংসায় মুখর হয়েছে বিশ্ব। অনেকেই তার ভূমিকাকে দৃষ্টান্তমূলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার খবর পাওয়ার পর তিনি দ্রুত মসজিদগুলোর পাশে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন, যাতে মুসলমানরা নির্ভয়ে নামাজ আদায় করতে পারে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর কোন কালবিলম্ব না করেই এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দ্রুত হতাহত ও তাদের পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন। মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিতে দাফনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারি খরচে সবার দাফনের ব্যবস্থা করেছেন।

শুধু তাই নয়, পরদিন হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সাথে দেখা করেছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। মুসলিম সংস্কৃতি অনুযায়ী পোশাক ও তার সাথে হিজাব পরিধান করে পরিবারগুলোর সাথে দেখা করেছেন। শোকাহত পরিবারগুলোকে অনেক দিনের চেনা স্বজনের মতোই সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং আর্থিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন।

বিশ্বের অনেক রাজনীতিকেরই যেখানে অভিবাসীদের বিষয়ে কিছুটা অনীহা বা অনাগ্রহী মানসিকতা রয়েছে সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম জেসিন্ডা। হত্যাকাণ্ডের পর পরই ফেসবুকে এক পোস্টে কিউই প্রধানমন্ত্রী আহত ও নিহতদের সম্পর্কে লিখেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড তাদের দেশ, তারা আমাদেরই’। জেসিন্ডা আরো বলেন, তার দেশ সব শ্রেণি, বর্ণ ও জাতির প্রতি সমান আন্তরিক, দয়ালু ও দায়িত্বশীল থাকবে।

এই বর্বর সন্ত্রাসী হামলার পর নিউজিল্যান্ডের অস্ত্র আইনে ব্যাপক সংশোধনের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের অন্য কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনাও করেছেন। শীঘ্রই হয়তো দেশটির অস্ত্র আইনে ব্যাপক সংস্কার আসবে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র আইনের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চললেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না, সেখানে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তির পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

রোববার নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের সাথেও সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা। সে সময় মাথায় ওড়না দেয়া জেসিন্ডার চেহারা ছিল বিমর্ষ। তার ঠোঁটে পরিষ্কারভাবে উদ্বেগ পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তার হাতগুলো তিনি বারবার কচলাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি কোনো কথা বলেননি। বরং চুপচাপ সব কিছু শুনে যাচ্ছিলেন। সে সময় কালো পোশাক পরিহিতা জেসিন্ডা ছিলেন অশ্রুসজল। ওই সাক্ষাতে তিনি বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় পুরো দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ।

ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। খুনি ট্যারেন্ট ফেসবুক লাইভে যুক্ত হয়েই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন।

সব মিলে চরম সঙ্কটময় এই পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীলতা ও উদারতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। কোন ধরনের বর্ণবাদী মানসিকতার ছিটেফোটাও তার মধ্যে ছিলো না। সারা বিশ্বেই যেখানে অভিবাসীদের সাথে বৈষম্যের ধারা চলমান সেখানে নিউজিল্যান্ড অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছ। আর এই দৃষ্টান্তের মূল কারিগর প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। সূত্র : সিয়াসাত ডট কম

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top