ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদে পুননির্বাচন ঘোষণা, ভিসির পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু করে তারা মিছিলযোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক, হল ও বিভাগ প্রদক্ষিণ করে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, ভিপি প্রার্থী অরিণ সেমন্তি, ফয়সাল মাহমুদ, জিএস প্রার্থী আসিফুর রহমান আসিফ, উম্মে হাবিবা বেনজির, রাশেদ খানসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও শিক্ষাথীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা পাঁচ দফা পুনর্ব্যক্তসহ তাদের সাথে সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
এর আগে রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে, জালিয়াতির ডাকসু নির্বাচন বাতিল করতে হবে; পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে হবে; এই নির্বাচনের সাথে জড়িত রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ভিসির পদত্যাগ করতে হবে; মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
এদিকে রোববার বিকেলে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছে, আমরা দেখিছি নির্বাচনে অনিয়ম কারচুপি হয়েছে। সে জায়গা থেকে বিভিন্ন প্যানেল ও প্রার্থীরা যে দাবি তুলেছে তার সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি। ডাকসুতে যে নির্বাচন হয়েছে সে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালিমা লেপে দেয়া হয়েছে।’
‘আমরা বলেছি, নির্বাচন আবার দিতে হবে। যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বিভিন্ন পদে থেকে যারা ভূমিকা রেখেছে তাদেরও পদত্যাগ করে করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। নির্বাচনে কিভাবে কারচুপি হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমি একজন ভিপি পদ প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের দিন রোকেয়া হলে লাঞ্ছিত হয়েছি, হামলার শিকার হয়েছি। সেই জায়গা থেকেও আমরা বলেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় কলঙ্কিত নির্বাচন আমরা চাই না।’
‘আমরা শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন চাই। যেখানে শিক্ষার্থীদের আস্থা ও আশার প্রতিফলন হবে। মানুষ জাতীয় নির্বাচনে যখন আস্থা হারিয়েছে, তখন আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নির্বাচন জাতীর কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা হতাশার সাথে পর্যবেক্ষণ করলাম যে সে ধরণের কোন নির্বাচন আমরা পাইনি। বরং শিক্ষকরা এ নির্বাচনে অনিয়মের সাথে জড়িত ছিল সেটাই আমরা দেখতে পেয়েছি।’
‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে যেসব শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে ও রোকেয়া হলে অনশন করেছিন তাদের দাবির সাথে আমরা একমত পোষণ করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।’
ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো দায়িত্ব নিইনি। সবার সাথে পরামর্শ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমি যখন গণভবনে গিয়েছিলাম তখনও আমি সবার সাথে পরামর্শ করে গিয়েছিলাম। অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার বিষয়ে ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে পুন:নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন আমরা ও তাদের দাবির সাথে একমত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাইলে আমি দায়িত্ব নিব না চাইলে আমি দায়িত্ব নিব না।
এতোদিন আপনারা সব ধরণের কর্মসূচি এক সাথে করেছেন আজ আলাদা আলাদা সংবাদ করলেন, তাহলে কি আপনারা আলাদা হয়ে গেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, ‘কালকে গণভবনে যাওয়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার বেশ কিছু কথা হয়েছে। সেই কথা ও মেসেজগুলো আমার সহযোদ্ধাদের সাথে শেয়ার করতে হয়েছে। আরো কিছু পরামর্শ ছিল। তাতে সকাল সকাল একসাথে আসার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এছাড়া আমি গণভবনে যা বলেছি তা আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য। যা কিছু হবে সবার সাথে পরামর্শ করেই হবে। ওখানে ছাত্রলীগের সবাই উপস্থিত ছিল। অনেক কিছু বলার থাকলেও বলতে পারিনি। তখন আমি অস্বস্থি বোধ করছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়ার কথা বলার পাশাপাশি নির্বাচনে যে অনিয়ম কারচুপি হয়েছে সেসবও তার দৃষ্টিতে দিয়েছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল বলেন, ‘আগামীর আন্দোলন আমরা একসাথে করবো। সব কর্মসূচি এক সাথে হবে।’
একই সময় পাঁচ দফা দাবিসহ সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্য থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।