ডিপারচার ইমিগ্রেশনের সাথেই সৌদি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আগাম সৌদি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন। হাজীরা বিমান থেকে নেমেই সরাসরি হজ টার্মিনালে প্রবেশ করতে পারবেন। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই সৌদি সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, আগামী বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন কারিগরি দল ঢাকায় আসছেন। এ ছাড়াও আগামী ৬ এপ্রিল সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালকসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাবের মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বছর থেকেই প্রি ডিপারচার ইমিগ্রেশনের কাজ শুরু হবে। এ জন্যই প্রথমবারের মতো সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক ঢাকায় আসছেন। তিনি বলেন, এতে হজযাত্রীদের দীর্ঘ সময় সৌদি হজ টার্মিনালে ইমিগ্রেশনের জন্য আর অপেক্ষা করতে হবে না। ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজই সৌদি কর্মকর্তারা ঢাকায় বিমানে ওঠার আগে সম্পন্ন করে নেবেন। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে মালয়েশিয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়া হজযাত্রীদের আগাম এই ইমিগ্রেশনের সুবিধা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ হবে এমন সুবিধাপ্রাপ্ত তৃতীয় দেশ।
তিনি বলেন, সর্বপ্রথম মালয়েশিয়া এই সুবিধা পাওয়ার পর হাবের মহাসচিব হিসেবে আমি বিষয়টি জানার পর থেকেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি উত্থাপন করে আসছিলাম। সর্বশেষ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সৌদি আরব সফরকালে তিনি বিষয়টি পুনরায় দৃঢ়তার সাথে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেন। সৌদি সরকার বিষয়টি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হজযাত্রীদের সর্বনি¤œ কোটা দেড় শ’ জন থেকে একজন করার বিষয়টি মক্কায় হজ মিশনকে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় অবহিত করে। একই সাথে প্রি-ডিপারচার ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে সৌদি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও কারিগরি দিক যাচাইয়ে দু’টি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের বিষয়টি জানায়। সৌদি প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র, ধর্ম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন এবং বিমানবন্দর ও হজ অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ছাড়ার সময়ই হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার কারিগরি দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
হজ মওসুম শুরুর পর বিশে^র বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বিমানে সৌদি আরব গমন করেন। এ সময় বিমানবন্দরে একের পর এক বিমান আসতে থাকে। ফলে ইমিগ্রেশনে জট লেগে যায়। অনেক সময় হজযাত্রীদের ২ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। হজযাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে সৌদি সরকার ইতোমধ্যেই পুরো হজ ব্যবস্থাপনাকে অনলাইনভিত্তিক করেছে। হজের নিবন্ধন, ভিসা, হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া, অর্থের লেনদেন সব কিছুই বর্তমানে অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি লাঘবের পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বের অন্যতম দু’টি মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে গত দুই বছর নিজ নিজ দেশ থেকে আগাম সৌদি ইমিগ্রেশনের পদক্ষেপ নেয় সৌদি আরব। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের জোরালো আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব এ বছর থেকে বাংলাদেশকেও এই সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের কর্মকর্তারা জানান।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত মাসে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম হাবের মহাসচিব জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রীর সাথে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। বৈঠকেই সৌদি মন্ত্রী এ বছর থেকেই তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তারই অংশ হিসেবে এখন সৌদি কারিগরি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছেন। এটি আমাদের একটি বড় অর্জন। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করছি বাংলাদেশের হাজীরা এ বছর থেকেই এই সুবিধা পাবেন।
আগাম ইমিগ্রেশনের পদ্ধতির ব্যাপারে জানতে চাইলে হাব মহাসচিব বলেন, সৌদি আরবের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা ঢাকায় বসেই ডিপারচার ইমিগ্রেশনের সময় সৌদি প্রবেশের ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাসপোর্ট ও কাগজপত্রে সিল দিয়ে দেবেন। হজযাত্রীরা বিমান থেকে নেমেই সরাসরি হজ টার্মিনালে চলে যেতে পারবেন। টার্মিনাল থেকে মুয়াল্লেমের গাড়িতে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হবে হাজীদের। এতে হাজীদের ভোগান্তি অনেক কমে আসবে।