মিয়ানমারে রাখাইনে প্রথমে রোহিঙ্গা যুবকদের হত্যা করা হয়। এরপর রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালানো হয়। আর শেষে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা শিশুদের। কখনও কখনও তাদেরকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন জাতিসংঘের তদন্ত টিমসহ বিশ্ব নেতারা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে আসা বিশ্ব নেতাদের কাছে রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় উঠে এসেছে রাখাইনের গণহত্যা এবং জাতিগত শুদ্ধি বা নির্মূল অভিযানসহ ভয়াবহ ও পৈশাচিক অপরাধযঞ্জের বিবরণ।
২০১৭ সালের ২৫ আগষ্টের পর মায়ের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা এক শিশু অপলক দৃশ্যে থাকিয়ে আছে এই মায়াভরা পৃথিবীতে। বালুখালী টু ময়নাঘোনা ১১ নং ক্যাম্পে অনিশ্চিয়তায় বেড়ে ওঠা শিশুটিকে দেখতে পায় এ প্রতিবেদক।
এ রকম হজোরো রোহিঙ্গা শিশু বেড়ে ওঠছে ছোট্র ছোট্র ঘরে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আপত্তি সত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কাজ চুড়ান্ত করে এসেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল।
তবে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ না থাকার অজুহাতে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, ট্রানজিট ক্যাম্পে তাদের স্থানান্তর না করাসহ নানা কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে নাগাদ তাদের প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা নিয়ে এখনও রয়েছে সংশয়। একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা হলে তারা অনেকেই মিয়ানমারে ফিরতে চান না। সেখানে এখনো ফেরার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
মিয়ানমারে ফিরে গেলে কী হবে তা ভেবে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা। রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ার আগে তাদের ফেরত পাঠালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়বে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা জিয়াবুর রহমান।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরগুলোর শোচনীয় অবস্থা ও তাদের চরমপন্থী হয়ে ওঠার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তারা বেকার ও শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই এবং সারাদিন তারা এক জায়গায় থাকছে এমন পরিণতি কে চাইতে পারে?
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে। আর তা সম্ভব না হলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ অঞ্চলে পাঠানো অনিবার্য হয়ে পড়বে।
জাতিসংঘ ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনেও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর গণহত্যা, যুদ্ধপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ ব্যাপক সহিংসতা ঘটার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল।