প্রতি শুক্রবারের মতোই ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গিয়েছিলেন ফারহাজ এহসান। নামাজ পড়তে। মাস কয়েক আগেই নামাজের স্থানে নতুন কার্পেট পাতা হয়েছিল। হালকা বাদামি রঙের। মুহূর্তে তা রক্তে ভেসে যাবে, তা কারোই বা জানা ছিল। ছবির মতো সাজানো নিউজিল্যান্ডের শান্ত শহরটি গুলির শব্দে কেঁপে উঠবে, কে ভেবেছিল! হামলার পর থেকে কোনো খোঁজ নেই ফারহাজের। আর বহু দূরে ভারতের হায়দরাবাদে আশঙ্কার ঢেউ আছড়ে পড়ছে মোহাম্মদ সাইদুদ্দিনের বুকে। তিনি ফারহাজের বাবা। ছেলে কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছে, কিছুই জানতে পারেননি সাইদুদ্দিন। দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খেতে শুরু করেছে। সরকারের কাছে তার কাতর আর্জি, ছেলে কোথায়, কেমন রয়েছে, তা দেখা হোক।
নিউজিল্যান্ডের মসজিদে গুলিচালনার ঘটনায় খোঁজ নেই সাত ভারতীয় নাগরিক ও দু’জন ভারতীয় বংশোদ্ভূতের। নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে শনিবার বলা হয়েছে, নিখোঁজদের খোঁজ পেতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এই ভারতীয়দের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়া দু’জন ভারতীয় নাগরিকের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে বলে জানা গেছে। তবে ছেলের খবর না পাওয়া পর্যন্ত মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছেন না সাইদুদ্দিন। তিনি বলেন, ফারহাজ ওই মসজিদে শুক্রবারের নামাজ পড়তে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে আর ফেরেনি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ জন এখনো নিখোঁজ। সরকারের কাছে আবেদন, আমার ছেলে কোথায়, কেমন রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হোক।
ভারতীয় একটি নিউজ পোর্টাল জানায়, ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবারের হামলায় জখম হয়েছেন আহমদ জাহাঙ্গির। তিনিও আসলে হায়দরাবাদেরই বাসিন্দা। তার ভাই খুরশিদের আর্জি, যাতে দ্রুত ভিসা মেলে সরকার তা দেখুক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাইয়ের কাছে যেতে চাই। এই অবস্থায় হায়দরাবাদে এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দাবি, শুক্রবারের হামলায় দু’জন ভারতীয় মারা গিয়েছেন। আরো এক ভারতীয় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন। এদিন নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে যোগাযোগের জন্য দু’টি নম্বর ট্যুইট করা হয়েছে। এই নম্বরগুলো হলো ০২১৮০৩৮৯৯ এবং ০২১৮৫০০৩৩।
ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলি চালানো অস্ট্রেলীয় যুবক হামলার আগে অনলাইনে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করে। ৭৪ পাতার ওই ইস্তাহারের শিরোনাম ‘দি গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’। সেখানে ভারত, চীন ও তুরস্ককে ‘পূর্বের সম্ভাব্য শত্রু দেশ’ বলে বর্ণনা করেছে ব্রেন্টন টারান্ট। অনলাইন পোস্টে তার বক্তব্য, আফ্রিকান, ভারতীয়, তুর্কি, সেমিটিক, যাই হোক না কেন, এই আক্রমণকারীদের ইউরোপীয়দের মাটি থেকে সরিয়ে দিতেই হবে। আমাদের মানুষ না হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মাটিতে যারা থাকছে, তাদের সরাতেই হবে। বিদ্বেষ থেকেই যে নারকীয় হামলা, টারান্টের পোস্ট থেকে তা স্পষ্ট।