ক্রাইস্টচার্চ হত্যাকাণ্ড : ঈদে বাড়ি ফেরা হবে না জাকারিয়ার

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে বন্দুকধারীর সন্ত্রাসীর হামলায় যে ৪৯ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জাকারিয়া ভূইয়া (৩০)। জাকারিয়া ক্রাইস্টচার্চে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ওয়েল্ডার টেকনোশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঘটনার সময় তিনি জুমার নামাজ পড়তে আল নুর মসজিদে গিয়ে ছিলেন। জুমার খুতবা চলাকালে এক অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী নির্বিচারে গুলি চালায় মুসুল্লিদের ওপর। জাকারিয়া ভূইয়া পলাশ উপজেলার গজারীয়া ইউনিয়নের জয়পুরা গ্রামের আব্দুল বাতেন ভূইয়ার ছেলে। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে মধ্যে জাকারিয়া ছিলেন চতুর্থ।

বন্দুকধারীর হামলায় নিহত হওয়ার খবর পরিবারের কাছে পৌঁছালে পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো গ্রাম জুড়ে। স্বজনদের আহাজারীতে ভারি হয়ে উঠে জয়পুরা গ্রাম।

জানা যায়, নিহত জাকারিয়া প্রায় আড়াই বছর আগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ওয়েল্ডার টেকনোশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি ৮ বছর সিঙ্গাপুরে কর্মরত ছিলেন। সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায়ই জাকারিয়া নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন।

শনিবার সরেজমিনে জাকারিয়ার গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, স্বজনহারা পিতা-মাতার আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এসে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। জাকারিয়ার মা শাহানারা বেগম ও তার স্ত্রী রিনা আক্তার শোকসইতে না পেরে কিছুক্ষণ পরপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। শোকাহত জাকারিয়ার বাবা আব্দুল বাতেন ভূইয়া জানান, শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি আসার পথে নিউজিল্যান্ড থেকে জাকারিয়ার এক সহকর্মী ফোন করে জানায়, সেখানের এক মসজিদে গোলাগুলি হয়েছে। এতে জাকারিয়া গুরুত্বর আহত হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে আবার খবর আসে জাকারিয়া আর নেই। গত আড়াই বছর হলো সে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছে। এর মধ্যে ছেলেকে হারাবো তা কখনো কল্পনা করিনি।

তিনি আরো জানান, নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগে একমাসের জন্য জাকারিয়া একবার বাড়ি এসেছিল। তখন বিয়ে করে সতের দিনের মাথায় নিউজিল্যান্ডে চলে যায়। এবার রমজানের ঈদে তার বাড়ি আসার কথা ছিল; কিন্তু এখন আমরা তার লাশের অপেক্ষায় রয়েছি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top