নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে যে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চলেছে, এত দূরে বসেও তাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে বাংলাদেশ। কারণ যে দুই মসজিদে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার একটিতেই নামাজ পড়ার কথা ছিল তামিমদের। সে জন্য পৌঁছেও গিয়েছিলেন তারা।
হ্যাগলি পার্ক ওভাল মাঠ থেকে আল নুর মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। সতেরো জনকে নিয়ে বাস দাঁড়িয়েছিল মসজিদের সামনেই। তবে আর ভেতরে ঢোকা হয়নি তাদের। ভেতরের তাণ্ডবলীলার সে খবর পেয়ে যান মসজিদের ভেতরে পা রাখার আগেই। ফলে দ্রুত সেখান থেকে ফিরে আসেন তারা।
মৃত্যুর এত কাছে থেকে ফিরে এলেও সেই শক্ এড়িয়ে যেতে পারেননি তারা। তারা পুরো সময়টাই তারা ছিলেন আতঙ্কে। মসজিদ থেকে বাসে ফিরেও তারা সিটে বসেননি। গোলাগুলি থেকে বাঁচতে তারা বাসের ফ্লোরেই অবস্থান নিয়েছিলেন।
কিছুক্ষণ পর তারা আশঙ্কা করেন, এ অবস্থায় যদি বন্দুকধারী বাসে ওঠে হামলা করে, তাহলে সবার জন্যই বিপদ। তখন তারা বাস থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তারা সবাই বাস থেকে নেমে পাশের হ্যাগলি পার্কে ঢুকে পড়েনন। পার্কটি থেকে মাঠের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার মতো। কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে বাস ফেলে কেউ হেঁটে আবার কেউ প্রায় দৌঁড়ে হ্যাগলি পার্ক ওভাল মাঠে ফিরে আসেন।
এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয় মুশফিকুর রহিমের মধ্যে। পার্ক থেকে মাঠে আসার পুরোটা সময় তিনি কাঁদতে থাকেন। এ সময় তামিমও খুব বিমর্ষ ছিলেন। তবু তিনিই সবাইকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। মাঠে আসার পর দ্রুত তাদের ড্রেসিংরুমে নিয়ে গিয়ে সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।
অন্যদিকে সফরকারী সাংবাদিক, মাঠের কর্মীসহ প্রায় চল্লিশজনকে স্টেডিয়ামের ক্যান্টিনে রাখা হয়। আড়াই ঘণ্টা পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। পরে ক্রিকেটারেরা হোটেলে ফেরেন বাসে করেই।
ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ তো সাথে সাথেই লাভ করা হচ্ছিল। কিছু পরে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তামিমরাও দেখছিলেন সেগুলো। কিন্তু সেগুলো দেখে কেঁপে উঠছিলেন তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরাও। হয়তো ধারণা করছিলেন, আরেকটু হলেই তো তারাও হতে পারতেন এ দুর্ঘটনার শিকার।
এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই সিরিজের তৃতীয় টেস্ট বাতিল হয়ে যায়। বাংলাদেশ দল ইতোমধ্যেই বিমানে উঠেছে। শনিবার রাতেই তারা ঢাকায় নামবেন।