নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে। তাদের মধ্যে আবার অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ হামলায় বেঁচে যাওয়া সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের অন্যতম ও সর্বশেষ ব্যক্তি রমজান আলী।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ৬২ বছর বয়সী রমজান আলী জানান, শুক্রবার মসজিদে বন্দুকধারীর গুলিতে আমার আশপাশে অনেকেই মারা গেছেন। ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সম্ভবত আমিই শেষ ব্যক্তি। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে বের করে এনেছেন।
রমজান আলী আরো বলেন, আমরা নিয়মিতই হ্যাগলি পার্কের ওই মসজিদে জুমার নামায আদায় করে থাকি। ঘটনার সময় মসজিতে অন্তত তিনশ মুসল্লি ছিলেন। হঠাৎ আমি দেখি সবাই মসজিদের দরজা লক্ষ করে ছুটছেন। অথচ এতো মানুষের একসঙ্গে মাত্র ওই দুইটি দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার বন্দুকধারী প্রধান দরজা দিয়ে গুলি করতে করতে ভেতরে ঢুকছে।
আলী বলেন, এ অবস্থায় আমি লুকানোর জন্য একটি বেঞ্চের পিছনে লাফ দিই, তবে এরপরও আমার পা দেখা যাচ্ছিল। তখন হামলাকারী লাগাতার গুলি করে যাচ্ছিল। আমার চাচাত ভাই আমার পেছনে বসে পড়ে এবং তার পায়ে আঘাত পায়।
একপর্যায়ে সে গুলি রিলোড করার জন্য কয়েবার থামে। কিন্তু এর পরপরই আবারো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আমি তখন কেবল প্রার্থনা করছিলাম, তার গুলি যেন শেষ হয়ে যায়।
পাশে একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলে হামলাকারী আমার সামনেই ওই ব্যক্তির বুকে পুনরায় গুলি করে। আমি তখন আমার চারপাশে তখন কেবল লাশ দেখেছি। পরে তিনি জানালা দিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে এসে হ্যাগলি পার্কের দিতে চলে যান।
রমজান জানান, তিনি এ ঘটনায় বেঁচে গেলেও ওই সময় তার পেছনে থাকা চাচাতো ভাই নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া হামলায় তার চাচাতো বোনের জামাই ও এক বন্ধু গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি এখন তাদের খুঁজে ফিরছেন।
ফিজির বংশোদ্ভূত রমজান আলী ১৯৮৯ সালের নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। তবে গত পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছেন প্রায় চার লাখ মানুষের শহর ক্রাইস্টচার্চে। বর্তমানে তিনি সেখানে হালাল খাবার কোম্পানিতে কাজ করছেন।
নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানকার লোকেরা খুবই ভালো। আমি এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে। তারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন। সূত্র : নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড
আরো পড়ুন : ড. সামাদ মুয়াজ্জিন ছিলেন, ইমামতিও করতেন
ডয়েচে ভেলে, ১৬ মার্চ ২০১৯, ০৯:৪১
নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের তিনজন বাংলাদেশি। এদের একজন ড. মো. আব্দুস সামাদ। তার তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তোহা মোহাম্মদ শুধু ঢাকায় থাকেন। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
আর বাকি দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে বসবাস করছিলেন ড. সামাদ।
ড. সামাদের বড় ছেলে তোহা গতকাল বলেছিলেন, বাবা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সেটা আমরা নিশ্চিত। খবর শুনে মা আর ছোট ভাই হাসপাতালে গিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে নিশ্চিত করেনি যে বাবা মারা গেছেন।
তারা বলছেন, যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে এসেছেন তাদের সবার চিকিৎসা চলছে। এখন যেহেতু সেখানে রাত, সকালে নিশ্চিত হওয়া যাবে আসলে বাবার অবস্থা কী? বাবা-মা ও দুই ভাই সবাই নিউজিল্যান্ডের নাগরিক। বাবা ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতেন। আর আরবের একজন ইমাম ছিলেন, তিনি না থাকলে বাবা ইমামতিও করতেন।
ড. সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। গত ৮-১০ বছর ধরে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেয়ে সেখানেই বসবাস করছিলেন তিনি। তবে মাঝে মাঝে তিনি দেশে আসতেন।
এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. সুলতান উদ্দিন ভূঞা সাংবাদিকদের বলেছেন, ড. সামাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি গত বছর চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮০ সালে ড. সামাদ কৃষিতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
এর আগে তিনি একবছর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরি করেছেন। চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৮ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ওই সময় নিউজিল্যান্ডেই তার দুই ছেলের জন্ম হয়।