মসজিদে যেভাবে হামলা চালানো হয়

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মসজিদে হামলায় প্রধান অভিযুক্ত একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক। তার নাম ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। এদিকে পার্শ্ববর্তী সাউথ আইসল্যান্ড শহরের লিনউড মসজিদেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় এই মসজিদে ১০ জন মুসল্লি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ নিয়ে দুটি মসজিদে আলাদা হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন।

আল নুর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার ব্যাপারে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আবার স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২৭ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা মসজিদের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত অবস্থায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কিছু বলা হয়নি। অনেককে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে চালানো হামলাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ প্রচার(সরাসরি সম্প্রচার) করেন এই হামলাকারী। ভিডিওতে হামলাকারী নিজেকে ব্রেন্টন ট্যারেন্ট বলে পরিচয় দিয়েছেন। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান-বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ তিনি।

ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারী মসজিদ আল নূর-এর সামনে তার গাড়ি পার্ক করার মধ্যে দিয়ে লাইভস্ট্রিম শুরু করে। হামলাকারী চালকের আসনে বসে ছিল এবং এসময় তার পাশের সিটেই অন্তত তিনটি অস্ত্র দেখা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে হামলাকারী ক্যামেরাটা তার মাথার সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। সঙ্গে থাকা অস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্তত একটি সেমি-অটোমেটিক ছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, মসজিদে ঢুকেই নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে এই হামলাকারী। অতর্কিত এই হামলায় তিনি সামনে যাকেই পেয়েছেন, হিংস্রভাবে গুলি করতে থাকেন। এসময় একজন পালানোর চেষ্টা করলে হামলাকারী আরও হিংস্র হয়ে তাকে গুলি করেন।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মসজিদের বিভিন্ন কোনায় মানুষের লাশ আছে আর বন্দুকধারী ঘুরে ঘুরে লাশের ওপরই গুলি চালাচ্ছে।

মসজিদে মাত্র তিন মিনিটের অবস্থান করে নির্বিচারে মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে মসজিদের সামনের দরজা দিয়েই বের হয়ে যান তিনি। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় উঠে সেখানেও নির্বিচারে গুলি চালান তিনি।

টিভি নিউজিল্যান্ড(টিভিএনজেড) এর রিপোর্টার স্যাম ক্লার্ক। তিনি হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, একজন সন্ত্রাসী একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে মসজিদ আল নুর-এ প্রবেশ করার সাথে সাথেই মুসল্লিদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।

ক্লার্ক বলেন,‘হামলাকারী সন্ত্রাসী কালো পোশাক পরিহিত ছিল, তার মাথায় ছিল হেলমেট এবং হাতে মেশিনগান। মসজিদের পিছন দিকের গেইট দিয়ে প্রবেশ করার পর হামলাকারী নামাজরত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে।’

হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লেন পেনেহা বলেন, কালো পোশাক পরা একজন সন্ত্রাসীকে তিনি মসজিদে প্রবেশ করতে দেখেছেন এবং এরপরই কয়েক ডজন গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। এরপরই কয়েকজন মুসল্লিকে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন।

মসজিদের পাশেই বসবাসরত পেনেহা আরো বলেন, পুলিশ ও জরুরী সেবা সংস্থা পৌছানোর পূবেই অস্ত্রধারী হামলাকারী পালিয়ে যায়। তার ভাষ্য,‘এরপর আমি সাহায্য করতে মসজিদের ভিতরে ছুটে যায়। কিন্তু আমি সেখানে= সর্বত্রই লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি।’

মসজিদে নামাজ পড়ার সময় সন্ত্রাসীর গুলিতে আহত হয়েছেন এক ব্যক্তি। শরীরের রক্তে তার কাপড় পুরো ভিজে গেছে। তিনি বলেন, হঠাৎ গুলি শুরু হলে তিনি একটি বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নেন। মসজিদে এসময় ৫০ জনের মত মুসল্লি ছিলেন বলে জানান তিনি।

ক্লার্ক বলেন, হামলার পর কিছু মানুষ মসজিদের দরজা ও জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অনেক মানুষই নিহত হয়েছে এবং নিহতদের মধ্যে ১৬ বা তারও কম বয়সীও রয়েছে।

ক্লার্ক বলেন, ‘ঘটনার পর ১০ থেকে ১৫ জন ব্যক্তিকে মসজিদের বাইরে দেখতে পাওয়া যায়, তাঁদের কেউ বেঁচে ছিলেন, কেউ ছিলেন মৃত।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য! আমি ২০ জন ব্যক্তিকে দেখেছি, তাঁদের কেউ ছিলেন মৃত, কেউ বা অনেক কাতরাচ্ছিলেন।’

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি মেঝেতে শতাধিক বুলেটের শেল দেখতে পাই। এবং দেখি একজন জানালা দিয়ে পালাতে চেষ্টা করতে গিয়ে গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

মোহন ইব্রাহিম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী নিউজিল্যান্ড হ্যারাল্ডকে বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম বিদ্যুতিক কোনো বিভ্রাটের কারণে বোধ হয় এরকম শব্দ হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখলাম লোকজন দৌড়াতে শুরু করেছে। সেখানে আমার এক বন্ধুও ছিল। তাঁকে ডাকলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমি তাঁর জন্য চিন্তিত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন তাঁরা।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top