ব্রেক্সিট ইস্যুটি প্রায় তিন বছর ধরে ব্রিটেনের জন্য গলার কাঁটা হয়ে আছে। ছাড়াও যাচ্ছে না, আবার নিজেদের অনুকূলেও নেয়া যাচ্ছে না। একের পর এক ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার আবারো সেখানে ব্রেক্সিটের সময়সীমা নিয়ে আবারো ভোটাভুটি হতে পারে।
ব্রেক্সিট প্রশ্নে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র খসড়া চুক্তি দ্বিতীয়বারের মতো নাকচ করে দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এর অর্থ হচ্ছে কোন ধরনের চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে ব্রিটিশ এমপিরা।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে ৩১২ জন আইনপ্রণেতা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, আর পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০৮ জন। তবে এই ভোটের ফল অনুযায়ী কাজ করা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং ইইউ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এখানে নাকচ করা হয়নি।
কিন্তু বুধবারের এই ভোটাভুটির ফলে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আরো সময় নেয়া হবে কি না, তা নিয়ে আরেকটি ভোটাভুটি হতে পারে। উল্লেখ্য, মার্চ মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে ইইউ ছেড়ে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রশ্নে আজ বৃহস্পতিবার ভোটাভুটি হবে। সেখানে যদি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন পার্লামেন্ট সদস্যরা এবং ইইউ তাতে সম্মত হয়, তাহলে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ মার্চের মধ্যে আর দেশটিকে ইইউ ছাড়তে হবে না।
ইইউ ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য ব্রিটেন একটি সুবিধাজনক চুক্তি করতে চাইছে। ইইউর দেশগুলোতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কী ধরনের সুবিধা পাবে- সেটিও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইইউর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি খসড়া চুক্তি করেছিলেন, যা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট জানুয়ারি মাসের এক ভোটাভুটিতে বাতিল করে দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার আরেকটি ভোটাভুটিতে ব্রেক্সিটের জন্য থেরেসা মে’র খসড়া চুক্তিটি দ্বিতীয়বারের মতো বাতিল করে দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।
প্রথমবার যে ব্যবধানে তার চুক্তিটি তখন প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, তার নজির ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নেই। তার নিজের রক্ষণশীল দলেরই ১১৮ জন এমপি ঐ চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তারপর গত কয়েক সপ্তাহ ইইউ নেতাদের সাথে নতুন দেন-দরবার করে কিছুটা পরিবর্তিত আকারে চুক্তিটি আবার সংসদে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মে। কিন্তু তাতেও কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি।
‘ব্রিটিশ এক্সিট’ নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে। এটি হচ্ছে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া। ৪০ বছরের বেশি সময় ইইউর সাথে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩ জুন এ বিষয়ে ব্রিটেনে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেদেশের নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- ব্রিটেনের কি ইইউর সাথে থাকা উচিত, নাকি উচিত না?
সেই গণভোটে ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে, আর থাকার পক্ষে ছিল বাকি ৪৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সাথে সাথেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটার কথা রয়েছে আগামী ২৯ মার্চ।সূত্র : বিবিসি