আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক র্যান্ড কর্পোরেশন জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীতে স্থূলত্ব সমস্যা বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইরান ও ভারতের মতো বেশ কিছু দেশ। অন্যদিকে চীনের সামরিক বাহিনীতে স্থূলতার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে অন্য সমস্যাও।
র্যান্ড কর্পোরেশন তাদের এক জরিপের রিপোর্টে জানায়, মার্কিন সৈন্যদের ৬০ শতাংশই অতিরিক্ত মোটা। ভারতের এক-তৃতীয়াংশ সেনাসদস্য স্বাভাবিকের চেয়ে মোটা। অন্যদিকে ইরানের ৪১ শতাংশ সেনার ওজন আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি এবং ১৩ শতাংশ রীতিমত স্থূলকায়। একই সমস্যায় ভুগছে ব্রিটেন, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মেক্সিকোর সেনাবাহিনীও। অন্যদিকে চীনের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে স্থূলতা ছাড়াও পাওয়া গেছে একাধিক সমস্যা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ফাস্টফুড খাওয়া, কম্পিউটার গেমস খেলা ও হস্তমৈথুন আসক্তি।
একটা দেশের সেনাবাহিনীতে সৈন্যরা স্বাস্থ্য ও ওজনের দিক থেকে কেমন হবে- তা নির্ধারিত হয় একটা মাপকাঠি দিয়ে, যাকে বলে বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই। এই বিএমআই হিসাব করে বের করা হয় যে একজন সৈন্যের উচ্চতা এবং ওজনের অনুপাত আদর্শ এব স্বাস্থ্যকর সীমার মধ্যে আছে কিনা।
সম্প্রতি দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক দেশেই সৈন্যদের মধ্যেই স্থূলতা বা অলস জীবনযাপনজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। র্যান্ড কর্পোরেশনের হিসেবে দেখা যাচ্ছে – আমেরিকান সৈন্যদের প্রায় ৬৬ শতাংশের ওজনই মাত্রাতিরিক্ত রকমের বেশি।
এ জরিপের ফল এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন মার্কিন তরুণদের বেশিরভাগই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহী নয়। বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মার্কিনীদের মধ্যে মাত্র ১১ শতাংশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে যারা নিয়োগ পরীক্ষায় বাতিল হচ্ছে তাদের এক-তৃতীয়াংশই বাদ পড়ে অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জেফরি ফিলিপস জানিয়েছেন, স্থূলতা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য কিংবা বাদ-পড়াদের শূন্যস্থান পূরণ করতে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে প্রতি বছর দেড়শো কোটি ডলার খরচ করতে হয়।
এদিকে চীনা সৈন্যদের নাকি প্রধান সমস্যা হচ্ছে ফাস্ট ফুড খাওয়া, কম্পিউটার গেম খেলা ও হস্তমৈথুন আসক্তি। গত বছর চীনা সেনাবাহিনীর পত্রিকা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি ডেইলি’র এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। এতে এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, নিম্নমানের খাবার, দীর্ঘ সময় কম্পিউটার গেম নিয়ে বসে থাকা, অতিমাত্রায় হস্তমৈথুন করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব – এ গুলোই হচ্ছে তরুণ সৈন্যদের ফিটনেস টেস্টে অনুত্তীর্ণ হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ। ওই সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, নতুন প্রার্থীদের ২০ শতাংশ ওজন পরীক্ষায় ফেল করেছে। কিছু সৈন্য ৫ কিলোমিটারের পাল্লার দৌড় শেষ করতে পারে নি।
ইরানের সৈন্যদেরও মোটা হবার সমস্যা আছে। গ্লোবালফায়ারপাওয়ার ডট অর্গ নামে একটি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ওয়েবসাইট বলছে, ইরানের পাঁচ লাখ সক্রিয় সেনা সদস্য রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বিএমসি পাবলিক হেলথ নামে এক জার্নালের নিবন্ধে বলা হয়, ইরানে ৪১ শতাংশ সেনার ওজন আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি এবং ১৩ শতাংশ রীতিমত স্থূলকায়।
অন্যদিকে দশ শতাংশ ব্রিটিশ সৈন্যই ডাক্তারি মাপকাঠিতে মোটা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সম্প্রতি ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় সেনা ঘাঁটি ক্যাটারিকের সৈন্যদের গ্রেগস নামে একটি রুটির দোকান থেকে খাবার কেনা নিষিদ্ধ করা হয়। একজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সৈন্যরা যেভাবে মোটা হচ্ছে – তাতে হয়ত অচিরেই যুদ্ধবিমান ও সাবমেরিনের চালকের আসন চওড়া করে বানাতে হবে।
এদিকে ভারতে ২০১৬ সালের এক জরিপে বলা হয়, দেশটির এক তৃতীয়াংশ সেনাই মোটা। এরপর গত বছর এপ্রিল থেকে সৈন্যদের খাবারের ব্যাপারে কড়াকাড়ি আরোপ করা হয়। মোটা সৈন্য ও অফিসারদের পদোন্নতি এবং বিদেশে পোস্টিং নিষিদ্ধ করা হয়। স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মেক্সিকোর সেনাবাহিনীতেও সৈন্যদের স্থূলতার সমস্যা মোকাবিলা করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অনেকেরই ধারণা, সামরিক বাহিনীর লোকেরা যে প্রশিক্ষণ নেয়, তাতে তাদের সবারই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। গবেষণা করে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা নানা রকম স্ট্রেস বা চাপের শিকার হয়। তারা মৃত্যু ও অন্যান্য নানা রকম ক্ষতিকর ঘটনা প্রত্যক্ষ করে, তাদের ঘুমের ব্যাঘাত হয়। এগুলোর কারণে তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাবার অভ্যাস তৈরি হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি