১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদ জানালে ভারত এবারো বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গঙ্গা চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী পানি দিতে পারছে না বলে দেশটি বাংলাদেশকে জানায়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এবার বাংলাদেশ গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে প্রতিটি কিস্তিতে কম পানি পায়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভারতকে ফের চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী পানি নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এমন তাগিদের জবাবে ভারত যৌথ নদী কমিশনকে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন আর বেশি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ভাটিতে পানি কম পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফারাক্কা পয়েন্টে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত মোট চারটি কিস্তির প্রতিটিতে কম পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। চারটি কিস্তিতে ২৮,২৮৭ কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী এ পরিমাণ পানি কম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য উপাত্তে দেখা গেছে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত চারটি কিস্তির প্রতিটিতে বাংলাদেশ কম পেয়েছে ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী। এ হিসাবে এ পর্যন্ত চারটি কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ৪৮,৩৫৯ কিউসেক পানি কম পেয়েছে। জানা গেছে, এ সময়ে বাংলাদেশ পাওয়ার কথা ২২,১,৬৬৬ কিউসেক পানি। কিন্তু পেয়েছে ১৭,৩,৬০৪ কিউসেক পানি। ভারত বাংলাদেশ চুক্তি সংলগ্নি-১-এর বণ্টন ফর্মুলা অনুযায়ী পানি নিশ্চিত করলেও ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। ভারত ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী পানি নিশ্চিত করেনি। তবে বাংলাদেশ এরপরও ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী গঙ্গায় ফারাক্কায় পানি নিশ্চিতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে বলেছে ভারতকে। এরপরও প্রতি কিস্তিতেই ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুযায়ী কম দিয়েছে ভারত। আর এসব তাগিদের প্রেক্ষাপটে ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা গঙ্গা পানি চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউলটি মেনে চলতে পারছে না। প্রতি বছরের মতো এবারো ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এটি চলতি বছরের মের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলবে।
২০১১ সালে প্রথম তিন মাস ১০ দিনে ৪,৩৮,৩১৯ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা। চুক্তি সংলগ্নি-২ যা ইন্ডিকেটিভ শিডিউল বলা হয়ে থাকে তা অনুযায়ী মোট ১০টি ৩,৭২,০৯৫ কিউসেক পরিমাণ পানি পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু গত ৯৮ দিনে সে হিসাবে বাংলাদেশ কম পেয়েছে ৬৬,২২৪ কিউসেক পানি। তখনো বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানালে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে।
আর এমনই বাস্তবতায় এবার পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস আজ। এবারের স্লোগান হচ্ছে নদী রক্ষা ও ব্যবস্থাপনায় নারী। ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের কুরিতিবা শহরে এক সমাবেশ থেকে ১৪ মার্চকে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন দেশে বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ওই সমাবেশে যোগ দেন। বাংলাদেশে দিবসটি বেসরকারি পর্যায়ে পালিত হচ্ছে ২০০৬ সাল থেকে। এবার এ উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।