প্রতিবেশীকে চিকিৎসা সহায়তা দিতে গিয়ে ইয়াবা মামলায় ফেঁসে গেছেন চকরিয়ার কলেজ ছাত্র সাদ্দাম হোছাইন (২৩)। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদালয়ের অধীনে অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ১০ মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী এ মেধাবী ছাত্র।
সুযোগ হলে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিতে চান সাদ্দাম। এমনটাই জানিয়েছেন কারাবন্দি এক সাংবাদিকের কাছে। কারামুক্ত হয়ে সাংবাদিক সেলিম এ বিষয়টি অন্যান্য সাংবাদিকদের জানালে প্রকৃত ঘটনার খোঁজে তৎপর হয়ে ওঠে সাংবাদিকরা।
জানা গেছে, সাদ্দাম হোসেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার হোয়াইকং ইয়নিয়নের খারাংখালি গ্রামের নাছর পাড়ার মৃত আলী আকবর এর সন্তান। চকরিয়ায় তিনি ব্যাচেলর বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন।
তিনি জানান, গত ৫ মে ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যায় তার প্রতিবেশী কালামিয়ার পুত্র আব্দুস শুক্কুর সাদ্দাম হোছাইনকে মোবাইলে জানান যে, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। কক্সবাজার হাসপাতাল থেকে তাকে চমেক হাসপাতালে রেফার করেছে। তারা যেহেতু চট্টগ্রাম শহরের পথঘাট ভালোভাবে চেনে না তাই সাদ্দামকে তাদের সাথে যেতে অনুরোধ করে। এই বলে তারা গাড়ীতে সাদ্দামের জন্য একটি সীট কেটে রাখে। সাদ্দাম না করতে পারেনি। মাগরিবের পর কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা তাদের বহনকারী বাসটি চকরিয়া স্টেশনে থামে। সাদ্দাম বাসে উঠে তার জন্য বরাদ্দ রাখা পার্শ্ববর্তী খালি সিটে বসে পড়ে।
এ সময় শুক্কুর সাদ্দামকে একটি ব্যাগ দিয়ে বলে, ‘এসব তোর ভাবীর কাপড়। এটি তোর পায়ের নিচে রাখ।’ সাদ্দাম সহজ মনে ব্যাগটি সিটের নীচে সযত্মে রাখে। গাড়ীটি চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশপথ কর্ণফুলী ব্রীজের সামনে পৌঁছলে পুলিশ গাড়ীটি তল্লাশী করার জন্য থামায়।
এক পর্যায়ে সাদ্দামের সিটের নীচ থেকে ব্যাগটি নিয়ে বলে ‘এটিতে কী আছে, এটি কার।’ জবাবে সাদ্দাম ব্যাগটি তার প্রতিবেশীর বলে পুলিশকে জানান। এসময় ব্যাগ খুলে ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ সাদ্দামের প্রতিবেশী আব্দুশ শুকুর ও তার স্ত্রীর কাছে ব্যাগটি ও সাদ্দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা হঠাৎ পাল্টে গিয়ে পুলিশকে জানায়, তারা সাদ্দামকে চিনে না।
এ কথা শুনে পুলিশ সাদ্দামকে শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে নীচে নামানোর চেষ্টা করলে সাদ্দামের সাথে সামান্য হাতাহাতি হয়। পরে গাড়ী থেকে সাদ্দামকে নামিয়ে বলে ৩ লাখ টাকা দিলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সাদ্দাম অপারগতা প্রকাশ করলে ১ হাজার পিচ ইয়াবা দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানায় মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়।
থানায় নিয়ে যাবার সময় আটককারী পুলিশ সাদ্দামকে বলে ‘তুই বাড়াবাড়ি না করলে ১০০ ইয়াবা দিয়ে চালান দিতাম। বাড়াবাড়ির শাস্তি হিসেবে ১ হাজার দিলাম।’
জানা গেছে সাদ্দামের বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা ও একমাত্র ছোটবোন ছাড়া কেউ নেই। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি টিউশনি করে পরিবার চালাতেন। গত দশ মাসে সাদ্দামকে তারা একবারের জন্যও দেখতে আসতে পারেনি যাতায়াত খরচের অভাবে।
সাদ্দাম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন রিক্সাচালক। মা-বোন চট্টগ্রামের পথঘাট চিনে না। আমার কোনো অভিভাবক না থাকায় জামিন নেওয়ার কোন ব্যবস্থাও হচ্ছে না। আমি জেলে থাকলে ও দুঃখ নেই। একদিন না হয় একদিন তো বের হতে পারব, কিন্তু আমি যদি অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাটা দিতে পারি তাহলে আমার আর কোন দুঃখ থাকবে না।
কারাগারে থেকে হলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এ কলেজছাত্র।