জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত দূরপাল্লার স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান বিমানবাহিনী। মঙ্গলবার পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে এই খবর প্রকাশ করে দ্য ডন।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাকিস্তান বিমানবাহিনী দূরপাল্লার স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রের এই সফল পরীক্ষাকে একটি বড় ধরনের সাফল্য ও মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছে। কারণ পাকিস্তানি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অক্লান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্মিত হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে এই স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রটি দিনে ও রাতের যেকোনো সময় নির্ভুলভাবে একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
এদিকে উন্নত প্রযুক্তির এই অস্ত্র তৈরির জন্য পাকিস্তানি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও বিমানবাহিনীর কর্মীদের স্বাগত জানিয়েছেন দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধান মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান। তিনি বলেন, পাকিস্তান একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। কিন্তু এই শান্তিপ্রিয় দেশটি যদি শত্রুদের আগ্রাসনের শিকার হয়, তবে আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেব।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) যুদ্ধবিমানের আক্রমণে লাইন অব কন্ট্রোল(এলওসি) লঙ্ঘন করা দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও দুটি বিমান পালিয়ে যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই স্মার্ট অস্ত্রের পরীক্ষা চালালো পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর হামলায় দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিধ্বস্ত ভারতীয় যুদ্ধবিমানের দুইজন পাইলট নিহত হয় এবং উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান নামে এক পাইলটকে জীবিত আটক করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। পরে ভারতকে শান্তির বার্তা হিসেবে আটককৃত ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান সরকার। বিশ্বনেতারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এর তথ্য অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ও শক্তির দিক দিয়ে পাকিস্তান ভারতের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে রয়েছে।
আরো পড়ুন : যেভাবে কারগিল যুদ্ধে আটক ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দিয়েছিল পাকিস্তান
নয়া দিগন্ত অনলাইন, (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
ভারতীয় যুদ্ধ বিমানের পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান আটক হয়েছেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে। পাকিস্তানের বিমান হামলা চালাতে গেলে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের গোলা ধ্বংস হয় তার বিমান, প্রাণ বাঁচাতে প্যারাস্যুট নিয়ে লাফ দেন অভিনন্দন বর্তমান। শুক্রবার তাকে ভারতের কাছে ফেরত দেবে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, শান্তির বার্তা হিসেবে পাইলটকে ফেরত দেয়া হবে।
এর আগে ১৯৯৯ সালেও কারগিল যুদ্ধের সময় এক ভারতীয় পাইলট আটক হয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ওই পাইলটের নাম ছিলো কাম্বামতী নচিকেতা। সেই দিনটি ছিলো ২৭ মে ১৯৯৯। সেদিন ভারতীয় বিমান ২৬ বছর বয়সী বাহিনীর ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট কাম্বামতী মিগ-২৭ যুদ্ধ বিমান নিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালাতে গিয়েছিলেন। সে সময়ও পাকিস্তানের হামলায় তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
ঘটনার দিন সকাল বেলায় পাকিস্তানি ভূখণ্ডে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে গিয়েছিলেন কাম্বামতী। একটি স্থাপনায় এক দফা বোম হামলা চালিয়ে আবার ঘুরে আসেন দ্বিতীয় দফা হামলা চালাতে। এসময় পাকিস্তানি আক্রমণের শিকার হয় তার বিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া স্টিনজার ক্ষেপণাস্ত্রের গোলার আঘাতে আগুন ধরে যায় বিমানের ইঞ্জিনে। প্রাণ বাঁচাতে প্যারস্যুট নিয়ে লাফ দেন পাইলট কাম্বামতী। মাটিতে নামার পরই তাকে আটক করে পাকিস্তান। জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে তাকে আটক করা হয়েছিল।
এক সপ্তাহ পর তাকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। সেবারও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয় শান্তির বার্তা নয়া দিল্লিতে পৌছাতেই তারা ভারতীয় পাইলটকে ফেরত দেয়। আটদিন বন্দী থাকার পর তাকে হস্তান্তর করা হয় ভারতের হাতে। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরীফ আর ভারতে তখন ক্ষমতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার।
আটকের ৮ দিন পর ৩ জুন ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয় নচিকেতাকে। মুক্তির আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অনিল তিপনিস টেলিফোনে কথা বলেন, পাইলট কাম্বমতী নচিকেতার সাথে।
এরপর পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন দূত তাকে লাহোর-অমৃতসর সড়কের ওয়াঘা বর্ডারে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে পায়ে হেঁটে পাঠানো হয় সীমান্তে ভারতীয় অংশে। বিষয়টির মধ্যস্ততা করেছিল রেড ক্রসের পাকিস্তান শাখা। ওই পাইলট বর্তমানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত আছেন। তথ্যসূত্র : দ্যা নিউজ ও উইকিপিডিয়া