ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় দফা হেরে গেলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দীর্ঘ দেন-দরবার করে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করেছিলেন, সেটির প্রতি সমর্থন আদায়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংসদের সামনে পেশ করা হলে, সেটি ১৪৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারে।
এর আগে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে তার প্রথম চেষ্টাও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল।
কী প্রভাব পড়তে পারে?
থেরেসা মের প্রস্তাব দ্বিতীয় দফায় ভেস্তে যাওয়ার পর, ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে? জানতে চাইলে ব্রিটেনের সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক রোযেন আযাদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা নির্ভর করবে ব্রিটেন কোনো ডিল বা চুক্তি নিয়ে বেরোতে চায় কি-না তার ওপর। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আরেক দফা ভোট হবে।
আযাদ চৌধুরী মনে করেন, ‘পুরো বিষয়টা এখন নির্ভর করবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর।’
তিনি বলেন, সামনে ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচন। তারা হয়তো দুই বছরের জন্য সময় দেবে।
‘বাজারে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। দেখবেন যে, আজই ডলার ও ইউরোর বিপরীতে পাউন্ডের ব্যাপক পতন হয়েছে।’
‘যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ গত একবছরে অনেক কমে গেছে। অনিশ্চয়তা যদি আরো বিরাজ করে অর্থনীতির জন্য সেটি খুবই খারাপ অবস্থা হবে।’
এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে আযাদ চৌধুরী বলেন, গবেষণা দেখা গেছে যে, কোনো ডিল (চুক্তি) নিয়ে যদি না বের হয়, তাহলে যুক্তরাজ্যের জিডিপি ৮% নেমে যাবে।
ব্রিটেনের সামনে এখন পথ কী?
১. চুক্তিহীন ব্রেক্সিট
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য ব্রিটেন একটি সুবিধাজনক চুক্তি করতে চাইছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলো কী ধরনের সুবিধা পাবে – সেটিও একটি বিষয়।
ব্রিটেন কোনো চুক্তি বা ডিল চায় কি-না সেটা জানা যাবে ১৩ মার্চের পর।
অধ্যাপক আযাদ চৌধুরী বলছেন, ‘ট্রেড ডিল বা বাণিজ্যিক চুক্তি যেগুলো হচ্ছে খুব ছোট কয়েকটি দেশের সাথে হচ্ছে। জাপানের সাথে কোনো বাণিজ্য চুক্তি এখনো হয়নি।’
‘তো লোকজনের কাছে সব খবর যথাযথভাবে পৌঁছানো এবং তখন লোকজন যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করতে পারবে। তখন হয়তো তারা বলতেও পারে যে, আমরা ব্রেক্সিট চাই না,’ বলেন তিনি।
২. প্রধানমন্ত্রীর খসড়া চুক্তির ওপর আরেক দফা ভোট
প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দ্বিতীয় দফায় হেরে গেলেও সবচেয়ে সাদাসিধে উপায় হবে হয়তো হাউজ অব কমন্সে তার খসড়া চুক্তিটি আরেক দফা ভোটাভুটিতে নিয়ে যাওয়া।
দু-দফা হারলেও তৃতীয় দফায় পেশ করা যাবে না এমন কোনো আইন নেই।
৩. পুনরায় আলোচনা
ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে সরকার একেবারে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিতে পারে এবং সেটা হয়তো সময়সাপেক্ষ হবে।
৪. ফের গণভোট
অন্যথায় পুনরায় গণভোটের আয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। নতুন করে গণভোটের জন্য আইনে নতুন সংযোজন প্রয়োজন হবে এবং কারা ভোটার হতে পারবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে।
অধ্যাপক আযাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে হয়, লোকজনের মতামত জানার জন্য আবার একটা গণভোট দিন, যেটার কথা অনেকেই বলছে, তাহলে দেখা যাক লোকজন কী সিদ্ধান্ত নেয়।’
‘কারণ লোকজন যখন ভোট দিয়েছিল তারা অনেকেই ভেবেছিল ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া হয়তো খুব সহজ হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেটা খুব মসৃণ নয়।’
কিন্তু আরেকটি গণভোটের সম্ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত – এই প্রসঙ্গে আযাদ চৌধুরীর বিশ্লেষণ হচ্ছে, ‘বৃহস্পতিবার ভোটের পর এটা বোঝা যাবে। ডিলে (দেরি) করতে চায় কি-না।’
‘সেক্ষেত্রে হয়তো এক থেকে দেড়-বছর সময় দেয়া হতে পারে। এই সময়কালে দীর্ঘসূত্রতা এবং বাজারে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে। এই সময়ের মধ্যে লোকজনকে একটি দ্বিতীয় অপশন দেয়া হতে পারে বলে আমার মনে হয়।’
৫. সাধারণ নির্বাচন আহ্বান
থেরেসা মে এই অচলাবস্থা নিরসনে এবং তার চুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক সমর্থন পেতে সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান করতে পারেন।
নির্বাচন আহ্বান করার ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু ২০১৭ সালের মতো তিনি নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচনের জন্য সংসদ সদস্যদের ভোটের আহ্বান জানাতে পারেন। সেজন্য দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন প্রয়োজন হবে।
৬. পুনরায় অনাস্থা ভোট
যেকোন সময় আরেক দফা অনাস্থা ভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।
আইন অনুসারে, প্রতি পাঁচবছর পরপর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে হিসেবে ২০২২ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা।
কিন্তু সরকারের প্রতি আস্থা-অনাস্থা প্রশ্নে এমপিদের ভোট যেকোন সময় হতে পারে।
৭. নো ব্রেক্সিট
ইউরোপীয় আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ব্রিটেন চাইলে এককভাবে ব্রেক্সিট বাতিল করতে পারবে।