গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো ভেঙে ফেলে বিরোধীদল শূন্য দেশগঠনের জন্যই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অত্যাচার-জুলুম করে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া সোমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর নির্বাচনে ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলো বলে তিনি মন্তব্য করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসার নামে নাটক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসার আর জেদের কারণে উপযুক্ত সুচিকিৎসার অভাবে সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন।
আমরা জানতে পেরেছি, তার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতি ঘটেছে। গত চারদিন তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া বিছানা থেকে নামতে পর্যন্ত পারছেন না। হুইল চেয়ারে বসতেও তার কষ্ট হচ্ছে। ঠিকমতো বসতে পারছেন না। তিনি রোগযন্ত্রণায় দিনরাত ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। গত পাঁচ মাস সম্পূর্ণ বিনা চিকিৎসায় ৭৪ বছর বয়সী ৪ বারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ছোট্ট অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ফেলে রেখে নারকীয় শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাঁচ মাস আগে গত বছরের ৬ অক্টোবরে তাকে পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয় চিকিৎসার নামে নাটক করতে। সেখানে কয়েকদিন রেখে চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করেই তাড়াহুড়া করে আবার পরিত্যক্ত কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। তারপর থেকে চিকিৎসাহীন অবস্থায় দিন পার করছেন তিনি।
দুই সপ্তাহ আগে ডাক্তাররা বলেছিলেন বেগম জিয়ার রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার রক্ত নেয়া হয়নি। রক্ত পরীক্ষা করাও হয়নি। বাস্তবে তার কোনো চিকিৎসাই চলছে না। চলছে চিকিৎসার নামে নাটক। এ বয়সে তার প্রতিনিয়ত মেডিকেল পরীক্ষা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্যা জরুরি। অথচ সরকার তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।
রিজভী জানান, স্পষ্ট করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আছেন, যাদের অধীনে তিনি সারাজীবন চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের কাছেই চিকিৎসা নিতে চান। অথচ সরকার গায়ের জোরে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা করাতে চায়। এটা দুরভিসন্ধিমূলক। এ ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের আচরণে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা ভুল ও বিনা চিকিৎসায় বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করতে চায়। জনগণ এ সরকারকে এক মুহূর্তের জন্যও আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সারাদেশ এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চায়। দেশনেত্রীর মুক্তি চায়।
রিজভী বলেন, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের চিকিৎসার ওপরতো এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কোনো মন্ত্রীরই ভরসা নেই। এই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি সরকারের মন্ত্রীদের মতো আমাদেরও অনাস্থা। দেশনেত্রীকে আজ-এখনই ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। নির্যাতন-অবিচার-অত্যারেরও একটা সীমা আছে। সেটাও অতিক্রম করে গেছে। এখন শোনা যাচ্ছে তাকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করার চক্রান্ত চলছে। কোনো স্থানান্তর ষড়যন্ত্র দেশবাসী মানবে না। আমরা মানবো না। তাকে মুক্তি দিতে হবে।
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল ডাকসুর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলো। ডাকসুতে ১৯৭৩ সাল ছাড়া আর কখনই ভোট ডাকাতির ও মহাজালিয়াতির ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেনি। সরকার যেহেতু বিরোধীদের এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ তাই আজ্ঞাবাহী ঢাবি ভিসি ডাকসুর নির্বাচন করলেন প্রহসন ও সন্ত্রাসী বার্তাবরণে। সিইসির অতৃপ্ত আত্মাকে নিজের দেহে ধারণ করলেন ঢাবির ভিসি।
তবে এর মধ্যেও উদ্দীপ্ত প্রাণের সাহসী তরুণরা ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে রক্তরঞ্জিত হয়েও প্রতিবাদ করেছে অমিতবিক্রমে। আমি মনে করি এই প্রতিবাদে অংশ নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররা ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো প্রমাণ করেছে তারা আলোর পথের যাত্রী।