বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অতীত ঐতিহ্য, গৌরব ও অর্জনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। দেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠের রাজনৈতিক অর্জন-অবদানও কম নয়। নেতা তৈরির আঁতুড় ঘর বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু)। ডান, বাম, মধ্যপন্থা- সব দলেই ডাকসুর সাবেক নেতাদের রয়েছে সক্রিয়-সগৌরব অংশগ্রহণ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৩৭ বার। ডাকসুর নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র নেতারাই পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সর্বশেষ সোমবারের ডাকসু নির্বাচন ছিল বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সোমবার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ভিপি (সহ-সভাপাতি) পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। জিএস পদে নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (Dhaka University Students Union বা DUSU) গঠন করা হয়। এরপর ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর এক সাধারণ সমাবেশের মাধ্যমে এই সংগঠনের প্রথম খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়। ১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এর নামকরণ করা হয় Dhaka University Central Students’ Union- DUCSU বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর ডাকসুর প্রথম ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। এক বছর মেয়াদকালের জন্য নির্বাচিত কমিটিগুলোর সিংহভাগই নির্ধারিত সময়সীমার বেশী সময় দায়িত্ব পালন করে।
১৯২৮-২৯ সেশনে ভিপি ও জিএস হিসেবে নির্বাচিত হন এ এম আজহারুল ইসলাম ও এস চক্রবর্তী, ১৯২৯-৩২ সময়কালে রমণী কান্ত ভট্টাচার্য ও কাজী রহমত আলী ও আতাউর রহমান, ১৯৪৭-৪৮ সেশনে অরবিন্দ বোস ও গোলাম আজম, ১৯৫৩-৫৪ সালে এসএ বারী এটি ও জুলমত আলী খান, ফরিদ আহমেদ।
এরপর ভিপি ও জিএস নির্বাচিতদের মধ্যে যথাক্রমে রয়েছেন নিরোদ বিহারী নাগ ও আব্দুর রব চৌধুরী, একরামুল হক ও শাহ আলী হোসেন, বদরুল আলম ও মোঃ ফজলী হোসেন, আবুল হোসেন ও এটিএম মেহেদী, আমিনুল ইসলাম তুলা ও আশরাফ উদ্দিন মকবুল, বেগম জাহানারা আখতার ও অমূল্য কুমার, এস এম রফিকুল হক ও এনায়েতুর রহমান, শ্যামা প্রসাদ ঘোষ ও কে এম ওবায়েদুর রহমান, রাশেদ খান মেনন ও মতিয়া চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন ও আসাফুদ্দৌলা, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী ও শফি আহমেদ, মাহফুজা খানম ও মোরশেদ আলী, তোফায়েল আহমেদ ও নাজিম কামরান চৌধুরী, আসম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর নেতা ছিলেন যারা
১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান।
১৯২৩ সালে ডাকসু সৃষ্টির পর পরপর দুইটি মেয়াদে টানা ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২।
১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্বপালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময়ে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আর নির্বাচন হয়নি। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।