ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১১ এপ্রিল। শেষ হবে ১৯ মে। মোট সাত দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হচ্ছে এ বছরের রমজান মাস। আর সে সময়েই অনুষ্ঠিত হবে শেষ তিন দফার ভোটগ্রহণ। বিষয়টি নিয়ে ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
রমজানের মাসে ভোটগ্রহণ নিয়ে রোববারই আপত্তি তুলেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের পাশাপাশি আম আদমি পার্টিও অভিযোগ করেছে, বিজেপি মুসলিমদের ভোট পাবে না জানে। তাই মুসলিমরা যাতে বেশি পরিমাণে ভোট দিতে না পারেন, তার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের মাসে তিন দফায় ভোটগ্রহণ ফেলা হয়েছে।
রমজানের মাসে লোকসভার ভোটগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের মুখে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিল, পুরো মাস বাদ দিয়ে লোকসভার ভোট করা সম্ভব নয়।
চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ৫ মে এ বছরের পবিত্র রমজানের মাস শুরু হওয়ার কথা, যা শেষ হবে ৪ জুন। তার মধ্যেই ৬ মে, ১২ মে ও ১৯ মে- তিন দফায় ভোটগ্রহণ হবে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম রোববার বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে সংখ্যালঘু মানুষদের অসুবিধা হবে। এখন আপের বিধায়ক সঞ্জয় সিংহ অভিযোগ করেন, মে-জুন মাসের গরমের মধ্যে রোজা রেখে চলা মুসলিমরা কী ভাবে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেবেন?
আপের আরেকজন বিধায়ক আমানতুল্লা খানের অভিযোগ, ১২ মে দিল্লিতে ভোট। ওই সময় রমজানের মধ্যে মুসলিমরা কম ভোট দিলে বিজেপিরই সুবিধা হবে। কংগ্রেস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান না নিলেও, মহারাষ্ট্রের কংগ্রেসের রাজ্যসভা বিধায়ক হুসেল দালওয়াই কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
এদিকে বিজেপি নেতারা বিরোধীদের এসব যুক্তিকে পাত্তা দিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, এত মরিয়া হবেন না। রমজানের সময় এর আগেও ভোট হয়েছে। বরং তারা পাল্টা যুক্তি দেন, মুসলিমরা বিজেপিকে ভোট দেন না, এই ধারণাটাই ভুল। দু’বছর আগে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে মুসলিমরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। দেওবন্দ, সাহারানপুর, মুজফ্ফরনগর, বিজনোর, বরেলির মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও বিজেপি জিতে এসেছে।
এদিকে এমআইএম-এর সভাপতি আসাউদ্দিন ওয়েইসির বক্তব্য একটু অন্যরকম। তার যুক্তি, রমজানের সময় মুসলিমরা আরো বেশি হারে ভোট দেবেন এবং খারাপ শক্তিকে হারাবেন।
২০১১-র আদমশুমারি অনুসারে দেশের জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ মুসলমান। কিন্তু লোকসভার ২১৮টি আসনে মুসলিম ভোটারদের নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম ভোট লোকসভা ভোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে মাত্র ২২ জন মুসলিম প্রার্থী জিতে এসেছিলেন। তবে বিশ্লেষকদের যুক্তি, মুসলিমদের জিতে আসার সঙ্গে মুসলিম ভোটের হার মিলিয়ে ফেললে ভুল হবে। বরং তারা অন্যদের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।