ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন কোটা আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুরু।
ভিপি পদে পরাজিত হয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
প্রায় দু হাজার ভোটের ব্যবধানে তাকে হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরু।
রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড: মো: আখতারুজ্জামান যখন ভিপি পদে ফল ঘোষণা করে তখন বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা ‘মানি না..মানি না..ভুয়া..ভুয়া’ শ্লোগানে সিনেট ভবন প্রকম্পিত করে তোলে।
ফল ঘোষণাস্থলে ভিসিকে ঘিরে দীর্ঘক্ষণ ধরে ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রতিবাদের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী নুরুল হক নুর ১১ হাজার ৬২ ভোট পেয়েছেন আর শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।
ওদিকে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি এবং সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
নির্বাচিত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী (স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক), মো:আরিফ ইবনে আলী (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), লিপি আক্তার (কমনরুম ও ক্যাফেটারিয়া), শাহরিয়া তানজিন অর্নী ( আন্তর্জাতিক সম্পাদক), মাজহারুল কবির শয়ন (সাহিত্য সম্পাদক), আসিফ তালুকদার (সংস্কৃতি সম্পাদক), শাকিল আহমেদ তানভীর (ক্রীড়া সম্পাদক), শামস-ঈ-নোমান (ছাত্র পরিবহন) ও আখতার হোসেন (সমাজসেবা সম্পাদক)।
সদস্য পদে বিজয়ীরা হলেন – যোশীয় সাংমা চিবল, রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা সিকদার, নিপু ইসলাম তন্বি, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, রাকিবুল হাসান রাকিব, নজরুল ইসলাম, মোছা ফরিদা পারভীন, মুহা. মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে পুনঃতফসিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব প্যানেল।
একে “প্রহসনের নির্বাচন” উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন ভোট বর্জন করা প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
ভিসি কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা মঙ্গলবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রদল এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সম্মিলিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র মুক্তি জোট, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট ও স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ।
প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের ডাকসুর সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী লিটন নন্দী তার ওপর হামলার অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন এবং পুনরায় ভোটের দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বেলা ১১টার দিকে তিনি ভোট পরিস্থিতি পরিদর্শনে গেলে ক্ষমতাসীন ছাত্র লীগের কয়েকজন কর্মী তাকে ধাওয়া দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এর আগে স্বতন্ত্র জোট তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে ভোর্ট বর্জনের ঘোষণা দেয়।
সেখানে তারা জানান, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এবং অরণি সেমন্তি খান ও শ্রবণা শফিক দীপ্তিকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করায় স্বতন্ত্র জোট ডাকসু ২০১৯ বর্জন করছে।”
সূত্র : বিবিসি