কলঙ্কিত ঢাকসু নির্বাচন : ছাত্রশিবিরের বক্তব্য

ভোটের আগের রাতেই ছাত্রদের ভোট চুরি, হামলা ও অনিয়মের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কলঙ্কিত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন, সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ শরফুদ্দিন ও সেক্রেটারি আহসান আব্দুল্লাহ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো মধ্য রাতের ভোটের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ডাকসু নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল আর একইভাবে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রসমাজের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর আপত্তির পরও অস্বচ্ছ ব্যালট বক্সে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হল থেকে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই সিল-মারা ব্যালট পেপারের বস্তা ও বক্স উদ্ধার করেছে। কবি সুফিয়া কামাল হলেও অনিয়মের অভিযোগে ভোট বন্ধ করা হয়েছে।

তারা বলেন, এরকম সবগুলো হলেই অনিয়ম করা হয়েছে। ভোটের সঠিক চিত্র যাতে তুলে ধরতে না পারে সেজন্য গণমাধ্যম কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। অনেক হলে প্রার্থীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অথচ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের বহিরাগতরা অবাধে বিচরণ করেছে হলের মধ্যে। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে যেসব গেস্টরুম, হলরুম রয়েছে, সেখানে তাদের অপরিচিত কোনো ছাত্রকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ছাত্রলীগের নির্দেশ মতো যারা ভোট দিয়ে এসেছেন, তাদেরই আবার কৃত্রিমভাবে ভোটারদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং একই নির্দেশে প্রতিটি ভোটের জন্য তারা ১০-১৫ মিনিট সময় নষ্ট করেছে। অনাবাসিক ছাত্রদের ভোট দিতে বাধা দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার পাননি প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। উল্টো একাধিক ভিপি প্রার্থীসহ অনেকে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ভোটচুরি ও অনিয়মের প্রতিবাদে ছাত্রসংগঠনগুলো এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে। এ ঘটনা পুরো জাতির জন্য বড় লজ্জার। শুধুমাত্র ছাত্রলীগকে অনৈতিক পন্থায় বিজয়ী করতে সরকার ও নীতিহীন দলকানা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের মত একটি গৌরব ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। এই ঘৃন্য ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। কিন্তু নির্লজ্জভাবে অন্যান্য নির্বাচনের মতো এখানেও জালিয়াতি করা হয়েছে। ডাকসুর সোনালী অতীতকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। ছাত্রসমাজের মত প্রকাশের অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। যা কোনোভাবেই ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো ডাকসু নির্বাচনেও মধ্যরাতে ভোট ডাকাতির প্রক্রিয়া ও পেশি শক্তি প্রয়োগ হওয়ার তীব্র আশঙ্কা থেকেই ছাত্রশিবির এ নির্বাচন বয়কট করেছিল। এখন ছাত্রশিবিরের আশঙ্কাই বাস্তবে প্রমাণিত হলো। লজ্জাজনকভাবে ছাত্রলীগ ও অবৈধ সরকারের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের মেরুদণ্ডহীন দলকানার অবস্থান পুণরায় প্রকাশ করলেন। যাদের কাছে ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থের চেয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতিটাই বড়। কিন্তু ছাত্রসমাজের ভোটাধিকার নিয়ে তামাশা করার অধিকার কারো নেই।

তারা বলেন, ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য সকল ছাত্রসংগঠন এই প্রহসনের ভোট বর্জন করে অবিলম্বে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই ছাত্রসমাজের ন্যায্য দাবী মানতে হবে। একইসাথে যারা ডাকসু’র নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আছে। গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন নিশ্চিত না করে ছাত্রসমাজ ঘরে ফিরে যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতিহীন লেজুরবৃত্তির কারণে যদি কোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে তার দায়ভার তাদেরকেই গ্রহণ করতে হবে।
সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top