ভাতের জন্যে দাদির আচল ধরে কাঁদছিলো ছয় ও সাত বছরের দু’নাতনী মোর্শেদা ও মারুফা। দাদির কোলে এক বছর বয়সের আরেক নাতি ফারুক ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝতে না পারলেও ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিলে দু’বোনের দিকে। দু’দিন হলো আগুনে কেড়ে নিয়েছে সব। পরনের বস্ত্র ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি দরিদ্র আনোয়ারার পরিবারে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার ভোররাতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিলখেরুয়া গ্রামে।
সোমবার সকালে সরেজমিন তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বশতভিটার পোড়া মাটিতে বসে কাঁদছেন আনোয়ারা বেগম। কোলে এক বছর বয়সের নাতি ফারুক। পাশেই দুই নাতনী মোর্শেদা ও মারুফা ক্ষুদার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে দাদির কাছে ভাত চাইছিলো। কিন্তু ভাত দেবার মতো দাদির কাছে যে কোনো ব্যবস্থা নেই।
এলাকাবাসী রোববার ভাতের ব্যবস্থা করে তাদের দু’বেলা খাইয়েছে। এখন এলকাবাসীর কাছে হাত পাতা ছাড়া যে আর কোনো ব্যবস্থা নেই। পরনের কাপড় আর গোয়ালে বর্গায় রাখা কয়েকটি গরু ছাড়া আর কিছু আগুনের কাছ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
আনোয়ারার স্বামী সত্তোর উর্ধ্ব জসীম উদ্দিন জানান, অনেক কষ্টে ৩ শতাংশ ভিটায় ছোট ছোট ৪টি টিনসেট ঘরে তিন ছেলে ও তাদের পরিবার নিয়ে থাকতেন তারা। জসীম উদ্দিনের বসত ঘরের অর্ধেকটা ছিলো গোয়াল ঘর। রোববার ভোরে গোয়াল ঘরের আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে ঠাসাঠাসি লাগানো অন্য ঘরগুলোতে। টিনসেটের ঘরে ছন ও পাটকাঠির বেড়া আর গোয়ালে গরুর জন্যে রাখা খড় থাকায় আগুন মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত গোয়ালের গরুগুলো ছেড়ে দেয়ায় রক্ষা করতে পারলেও আর কিছুই জলন্ত আগুন থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জসীম উদ্দিনের বয়স হয়েছে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। তিন ছেলে মানিক, রতন ও বাবুল এলাকা ঘুরে প্লাস্টিক ও এলোমেনিয়ামের পরিত্যাক্ত ভাঙা জিনিসপত্র ক্রয় করে তা বিক্রি করে কোনো মতে নিজেদের সংসার চালায়। এখন আগুনে সব পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা পুরো পরিবার। জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ঘরে থাকা রান্নার হাড়ি-পাতিল, কাপড়-ছোপড়, রান্নার জন্যে কেনা চালসহ পুড়ে গেছে ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র। মানিকের সাত বছরের মেয়ে মোর্শেদা ও রতনের ছয় বছরের মারুফা পাশের ধনিয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। ওদের বইপত্রও পুড়েছে আগুনে।
আনোয়ারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমরা না খায় থাকতাম পারবাম স্যার, আমার নাতিডিরে কি খাওয়াই। নাতিডি সকাল থাইক্যা ভাত চাইতাছে। এহনো কিছু দিতাম পারছি না। বাপ মা কাজে গেছে একদিন কাজ কইরা কি আনবো। চাল না হাড়ি। পড়েনের কাপড় ছাড়া কাপড় নাই। কোনডা ত্বয়া কোনডা আনবো। আমার নাতিডিরে দেখ্যা যদি কেউ কিছু সাহায্য করতো তাইলে আপাতত দাড়াইতে পারতাম। ঘর নাই ভাত নাই আগুনে লয়াগেছে সব।’