যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আফগানিস্তানের যেসব ব্যক্তিকে গোণায় ধরতো তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর। তাকে আটক করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্রের বাঘা বাঘা সামরিক বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এমনকি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাকে কব্জায় নিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
সম্প্রতি এক বইয়ে জানা গেছে, আফগানিস্তানে একটি মার্কিন ঘাঁটির কাছেই ছিল তার বসবাস। ‘সার্চিং ফর এন এনিমি’ শীর্ষক এক বইয়ে এ দাবি করা হয়েছে।
বইটি লিখেছেন নেদারল্যান্ডসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক বেট্টে ড্যাম। ‘সার্চিং ফর এন এনিমি’ বইয়ে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র বারবার পাকিস্তানকে দায়ী করে বলেছে, মোল্লা ওমর পাকিস্তানে পালিয়ে গেছেন। পাকিস্তান সরকার তাকে আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু সত্য কথা হলো তিনি কখনোই পাকিস্তানে যাননি। বরং তিনি নিজের বাড়ি জাবুল প্রদেশে অবস্থিত বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে তিন মাইল দূরে বসবাস করতেন।
বেট্টে ড্যাম দাবি করেন, পাঁচ বছর ধরে তালেবান নেতাবৃন্দের সাক্ষাৎকার নিয়ে এবং তাদের ওপর গবেষণা করে বইটি লিখেছেন। তিনি বলেন, ইঙ্গ-মার্কিন আগ্রাসনের মুখে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের পর মোল্লা ওমর আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৩ সালে অসুস্থতাজনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনেই থাকেন। এ সময় জুড়ে তার দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করেন জব্বার ওমরি নামের এক ব্যক্তি। বেট্টে ড্যান তার সাথে কথা বলে এ সব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
২০০১ সালে নাইন-ইলেভেন হামলার তিন মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারকে উৎখাত করে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। সে সময় মোল্লা ওমরের মাথার দাম ঘোষণা করা হয় এক কোটি ডলার। কিন্তু এত বিশাল পরিমাণ অর্থের পুরস্কার ঘোষণার পরও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি যেমন বিস্ময়কর ছিল, তার চেয়ে বিস্ময়কর নতুন এই তথ্য, যাতে বলা হয়েছে, মার্কিন ঘাঁটির এত কাছাকাছি অবস্থানে এক যুগ কাটানোর পরও তাকে কেউ আটক করতে পারেনি। মোল্লা ওমরের দেহরক্ষী জব্বার জানান, এই দীর্ঘ সময়ে একবার মাত্র ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ও তারা মোল্লা ওমরের বাড়ির গোপন কক্ষের সন্ধান পায়নি। ফলে তখনও মোল্লা ওমরকে আটক করতে পারেনি মার্কিন সেনারা।
এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তিনি কেবল একবার স্থান পরিবর্তন করেন। ২০০৪ সালে তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণকাজ শুরু করলে সে সময় তিনি তার দ্বিতীয় বাড়িতে সরে গিয়েছিলেন। এ সময় মার্কিন নজরদারি থেকে মুক্ত থাকতে আধুনিক যোগাযোগের যন্ত্রপাতি এড়িয়ে চলতেন। যোগাযোগের জন্য তিনি কেবল পুরোনো মডেলের একটি নকিয়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন, যাতে সিমকার্ড ছিল না।
বিবিসি জানায়, ফেব্রুয়ারিতে ডাচ ভাষায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই ইংরেজি ভাষায় এর ভার্সন বাজারে আসবে।
এ সময় তিনি কারো সাথেই দেখা করতেন না, এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথেও নয়। এ কারণে ড্যান দাবি করেন, যদিও তালেবান সে সময় ঘোষণা দিয়েছিল, তারা মোল্লা ওমরের পরিচালনায় চলছেন, তা ঠিক নয়।
বইটিতে আরো বলা হয়, তিনি বিবিসির পশতু ভাষার খবর শুনতেন। তবে এসবের প্রতিক্রিয়া দেখাতেন খুব কম। এমনকি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুসংবাদেও তিনি খুব কমই মন্তব্য করেন।
সূত্র : অ্যারাব নিউজ, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন