ডাকসু নির্বাচন : যেভাবে উদ্ধার হয় বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট

বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার ও এই ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিতের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ডাকুস নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১ টা ১০ মিনিট থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান এ কথা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, উদ্ধারকৃত বস্তাভর্তি সিলমারা ব্যালট পেপারের সবগুলোই ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের নামের পাশে সিল মারা ছিল। কুয়েত মৈত্রী হলের রিডিংরুমের (পাঠকক্ষ) দরজার ছিটকিনি ভিতর থেকে আটকে দিয়ে এসব ব্যালট পেপারে সিল মারার কাজ চলছিল। অন্যদিকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটগ্রহণ শুরু করার আগে প্রকাশ্যে সবার সামনে ব্যালট বাক্স খুলে দেখানোর দাবি করলেও হল প্রভোস্ট শবনম জাহান তা দেখাতে বারবার অস্বীকার করেন।

কুয়েত মৈত্রী হল থেকে বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার উদ্ধারের পর ওই হলের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

এদিকে হলের গেইটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী এবং প্রো-ভিসি মোহাম্মদ সামাদকে ঘিরে ভোট বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ হলে ঢোকার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীদের বাধায় তা পারেনি।

বিপুল পরিমাণ ব্যালট দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা হলের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, আগের রাতেই এসব ব্যালটে ‘ক্রস চিহ্ন’ সিল মেরে ভোটের চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের নামে ভোটের সিল মারা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের নামের পাশে নির্ধারিত প্রতীকে সিল মেরে ভোট দেয়ার নিয়ম। তবে ডাকসু নির্বাচনে ভোটারদের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন (x) দিয়ে ভোট দেয়া হয়।

যেভাবে উদ্ধার হলো সিল মারা ব্যালট :

কুয়েত মৈত্রী হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বলেন, সোমবার সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরুর কথা থাকলেও ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই অন্যান্য হলের মতো এখানেও ছাত্রীদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। সাড়ে সাতটার দিকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী প্রার্থীরা হল প্রভোস্টের কাছে তাদের সামনে ব্যালট বক্স খোলার দাবি করেন। তবে তাদের সামনে বাক্স খোলা হয়নি। এরপর সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটের দিকে হলে প্রক্টর আসেন। এরপর প্রক্টর ও হল প্রভোস্ট মিলে ব্যালট বাক্স হলের রিডিং রুমে নিয়ে যান। এরপর ছাত্রীরা গিয়ে রিডিং রুম থেকে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট উদ্ধার করেন।

কুয়েত মৈত্রী হল সংসদের ভিপি পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুন্নাহার পলি অভিযোগ করেন, হলের মিলনায়তনের পাশে রিডিং রুমে বসে ব্যালট পেপারে ভোটের চিহ্ন (সিল মারা) দেয়া হচ্ছিল।

তিনি অভিযোগ করেন,‘ভেতর থেকে দরজায় ছিটকিনি দিয়ে ভেতরে বসে এগুলো করছিল। ওই রুমে বসে সিল মারছিল। আমরা সাড়ে ৭টার দিকে ম্যামকে বলেছিলাম ‘ম্যাম আমরা দেখব ব্যালট বাক্স খালি কিনা। তিনি কিছুতেই দেখাবেন না। উনি বলেন, প্রক্টর স্যার এসে দেখাবেন।’

তিনি আরো বলেন,‘প্রক্টর স্যার এসে বললেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সব দেখাব। এটা বলে তিনি ওই রুমে নিয়ে গিয়ে ভিতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে দেন। আমরা দরজা ধাক্কা দিলেও কিছুতেই খুলতে চাননি। যখন দরজা খুললো, আমরা ভেতরে গিয়ে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল মিলিয়ে ভোটার রয়েছেন মোট ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হলে ভোটার ১ হাজার ৯৬৯ জন।

ডাকসুর জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফুর রহমান অভিযোগ করেন, উদ্ধার হওয়া সবগুলো ব্যালটে ‘একই প্যানেলের’ (ছাত্রলীগের) প্রার্থীর নামে ভোটের চিহ্ন দেয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ঢাবির উন্নয়ন ও অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মালিহা নওশিন খান বলেন,‘ভোটগ্রহণ শুরুর আগে থেকেই হলের অডিটোরিয়ামের ভেতরে একটি কক্ষ বন্ধ অবস্থায় ছিল। ভোট নেয়ার আগে প্রতিটি হলে ব্যালট বাক্স খুলে দেখানো হচ্ছিল। তবে আমাদের হলের প্রভোস্ট তা দেখাননি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ভোটগ্রহণে বাধা দেন। পরে প্রো-ভিসি আব্দুস সামাদ ও প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রভোস্টসহ অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীরাও সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় অডিটোরিয়াম থেকে একটি ব্যালট বাক্স পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবারও ব্যালট বাক্সটি ভেতরে আনা হলে শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রবেশ করেন। শিক্ষার্থীরা অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে তালা বন্ধ কক্ষ থেকে এক বস্তা ব্যালট উদ্ধার করেন। ব্যালটে হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নামের পাশে ক্রস চিহ্ন (ভোট) দেয়া ছিল।’

ডাকসুতে ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন,‘আমরা আগে থেকেই এমন আশঙ্কা করেছিলাম। সেই আশঙ্কা থেকেই সকালে হলগুলোতে ব্যালট ও বাক্স পাঠানোর দাবি করেছিলাম। তবে প্রশাসন আমাদের কথা রাখেনি। তারা আগের রাতে ব্যালট ও বাক্স কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়ে ভোট কারচুপির সুযোগ করে দিয়েছে।’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top