একনায়কের দেশ উত্তর কোরিয়া। পুরো পৃথিবীতে বিশুদ্ধ একনায়কতন্ত্র যে কয়টি দেশে চলছে, সেগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়া তুলনাহীন।
কিন্তু তাই বলে দেশের পার্লামেন্টের কোনো মূল্য নেই, এ কথা বলা যাবে না। অন্যদের সময়ে তো বটেই বরং কিম জং উন ক্ষমতা গ্রহণের পরই সে দেশে দুইবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। গত রোববার কিম জং উনের মেয়াদে তারা দ্বিতীয়বারের মতো ভোট দেন।
উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক নাম ‘সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি’। এতে রয়েছেন ৭০০ সদস্য। দেশের শাসনক্ষমতায় এদের ভূমিকা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রশ্ন নেই নির্বাচিত হয়ে আসার ব্যাপারে। অবশ্যই তাদেরকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই পার্লামেন্টে আসতে হয়।
বেশিরভাগ সময়ই সেখানে ভোট পড়ে ১০০ শতাংশ। কারণ সে দেশে ভোটদান বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যক্তি ভোট না দিলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালায় গোয়েন্দারা। অথবা ধরে নেয়া হয় তারা চীনে পালিয়ে গেছে।
কিন্তু নির্বাচনে দাঁড়ায় কারা? কেমনই বা হয় তাদের প্রচারণা। এ প্রশ্নের জবাব খুবই সোজা। উত্তর কোরিয়ার সরকার যাদের দাঁড় করায় নির্বাচনে তারাই দাঁড়ান। কোনো বিরোধী দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বলে কোনো কথা নেই। সরকার যাদের ঠিক করে দিয়েছে, তারাই একমাত্র প্রার্থী। তাই প্রচারণারও কোনো দরকার নেই।
নির্বাচনের দিন যখন ভোটাররা ভোট দিতে যান, তখন তাদের হাতে ওই এলাকার মনোনীত প্রার্থীর নাম লিখে দেয়া হয়। সেটাই উন্মুক্ত বাক্সে ফেলে দিয়ে আসেন ভোটাররা। এটাই তাদের কাজ। এ নাম কাটা যাবে না, এতে অন্য নাম লিখা যাবে না। নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটের বুথ থাকে। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করা মানেই সন্দেহের শিকার হওয়া। তাই কেউ তাতে গিয়ে নিজের অবস্থান খারাপ করেন না। দুয়েকজন যারা এরকম করেছে তাদেরকে পাগল আখ্যা দেয়া হয়।
আবার এভাবে ভোট দিতে হয়েছে বলে মন খারাপ করা যাবে না। বরং উৎফুল্ল চেহারায় ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভোট দেয়া শেষ হয়ে গেলে ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে উপস্থিত অন্যান্য ভোটারদের সাথে মিলে আনন্দ করবেন এই কারণে যে দেশের সুযোগ্য নেতাদের প্রতি সমর্থন জানাতে পেরে তারা খুশি হয়েছেন।
ভোটকেন্দ্রও কিন্তু নির্জীব থাকে না। বাদ্য বাজনা বাজিয়ে রীতিমত উৎসবের রূপ দেয়া হয়। লোকজনরা সবাই নতুন নতুন কাপড় পরে রাস্তায় উৎসবমুখর পরিবেশ ধরে রাখেন।
উত্তর কোরিয়া সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। কিম পরিবার বংশপরম্পরায় এই দেশটি শাসন করছে। শাসক পরিবার এবং ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য দেখানো প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক। সরকারের সমর্থনে উল্লাস প্রকাশ করা উত্তর কোরীয়দের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নির্বাচনের দিনে ১৭ বছর বয়সের ওপর সব নাগরিককে ভোট দিতে হয়।
‘সুপ্রিম পিপলস্ অ্যাসেম্বলি’ (এসপিএ) মূলত একটি রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট। তারপরও প্রতি পাঁচ বছর পর পর এর নির্বাচন হয়। এটিই রাষ্ট্রের একমাত্র আইন প্রণয়নকারী শাখা। মূলত উত্তর কোরিয়ার আইন তৈরি হয় ক্ষমতাসীন দলের হাতে আর সংসদ শুধুমাত্র সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়।
সবাই আসলে জানে উত্তর কোরিয়ায় কোনো বিরোধীদল নেই। কিন্তু আসলে সে দেশের পার্লামেন্টে তিনটি দল রয়েছে। কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির রয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন। অন্যদিকে, সোশাল ডেমোক্র্যাট পার্টি আর চন্ডোইস্ট চঙ্গু পার্টির সামান্য কিছু আসন রয়েছে। আসলে এই তিনটি দলের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। তাদের মিলিত জোট ডেমোক্র্যাটিক ফন্ট ফর দ্য রিইউনিফিকেশন অব কোরিয়া’ই দেশ শাসন করে থাকে।
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান। ২০১১ সাল থেকে ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অব কোরিয়া তথা গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার শাসনদণ্ড তারই হাতে।