প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে গণিত ও বিজ্ঞান গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাধিকার

মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে অব্যাহত প্রশ্নের মুখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করা গেলেও শিক্ষার মান নিয়ে তোপের মুখে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। প্রতি বছরের জাতীয় বাজেটে এবং দাতাদের অনুদানে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮, লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশ তার সব শিশুকে প্রাথমিক স্কুলে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও শিক্ষার গুণগত মান এখনো গভীর উদ্বেগের পর্যায়ে রয়েছে। বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং গুণগত মান ভালো নয়। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে। তাও এদের পড়ার মান খুব খারাপ। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্যবইয়ের গণিত বোঝে না।

এ ছাড়া, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রতি বিশেষ শর্তারোপের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগে এবার গণিত ও বিজ্ঞান গ্রাজুয়েটদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আগামী সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা থেকেই গণিত ও বিজ্ঞান গ্রাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ২০ শতাংশ শিক্ষক নেয়া হবে এদের মধ্য থেকে। সচিব আরো বলেন, সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড’- কর্মসূচি চালু হয়েছে। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষায় অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে।

মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অতীতে দশম শ্রেণী পাস নারী শিক্ষক নিয়োগকে বড় ধরনের ভুল বলে মনে করা হচ্ছে এখন। এ কারণে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যোগ্যতা ন্যূনতম গ্রাজুয়েট করা হয়েছে। এখন নারী-পুরুষ সমান যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ডিপিই সূত্রে বলা হয়েছে, মার্চের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান। এ ১২ হাজার পদের জন্য সারা দেশ থেকে প্রায় ২৪ লাখ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছে। আবেদনকারীর সংখ্যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বাধিক হওয়ায় লিখিত পরীক্ষা কয়েকটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ মার্চের মধ্যে প্রথম ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামীতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অংশ হিসেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিষয়টির প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। পিটিআইগুলোকে আরো কার্যকর করা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের আওতা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পিডিইপি-৪’র আওতায় এ বিষয়গুলোকে কার্যকর করা হবে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top