বোরকা পরায় দেশের বিভিন্ন স্কুলে নিগ্রহের শিকার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলছাত্রীদের বোরকা পরিধানের অধিকার চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর আগামী ১৪ মার্চ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনার পর আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ। তিনি বলেন, আমি আদালতে বলেছি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি স্কুলের মতো বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে হাইস্কুলের ছাত্রীদের বোরকা পরে আসার কারণে ক্লাস করতে দেয়া হয়নি, কখনো কখনো পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি এবং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে একজন ছাত্রীর সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। স্কুলে ড্রেসের পাশাপাশি সে বোরকা পরতে পারে। যেমন শীতের দিনে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল ড্রেসের পাশাপাশি সোয়েটার পরে থাকে।
গত ১৭ জানুয়ারি দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ মাহবুব আলম ও মোহাম্মদপুরের তাজ জামে মসজিদের খতিব আল্লামা আবুল খায়ের মুহাম্মদ আজিজুল্লাহের পক্ষে আইনজীবী মুহম্মদ আহাসান ও শেখ ওমর শরীফ রিটটি দায়ের করেন। বোরকা পরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীরা শিক্ষকদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলছাত্রীদের বোরকা পরার অধিকার নিশ্চিত করণে এ রিট দায়ের করা হয়।
রিটে দেশের স্কুলগুলোতে স্কুল ইউনিফর্মের ওপর দিয়ে বোরকা পরিধানে ছাত্রীদেরকে বাধা না দেয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রীদেরকে বোরকা পরিধানে বাধাদানকারী স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবেনা, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণর এক ছাত্রী বোরকা পরায় তাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে তাকে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে দেননি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ কাশেম।
ওই ঘটনার পরদিন সেই ছাত্রীর মা বোরকা পরার অনুমতির জন্য গেলে প্রধান শিক্ষক মারমুখী আচরণ করে তাকেও বের দেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্কুলে সংঘটিত একই ধরনের আরও কিছু ঘটনা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
রিটে দাবি করা হয়, ইসলাম সম্মত পোশাক পরিধান করা সকল মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক। স্কুল ইউনিফর্মের ওপর নিজের পছন্দমতো দ্বীনি পোশাক পরিধান করার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে। কেননা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিককে যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে এবং সংবিধানের ২ (ক) অনুচ্ছেদে দ্বীন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সুতরাং স্কুল ইউনিফর্মের পাশাপাশি বোরকা পরিধান করতে না দিয়ে স্কুলছাত্রীদের সাংবিধানিক অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে আইনজীবী শেখ ওমর শরীফ জানান।