বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ছয়জনের লাশের মধ্যে পাঁচজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে শরিয়তপুর জেলার সখিপুরের নিজ এলাকায়। রোববার সকালে চারজনের লাশ কিরণনগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে দুইজনকে পারিবারিক কবরস্থানে ও অপর দুইজনকে কিরণনগর গনকবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে গত শনিবার উদ্ধার হওয়া আরো একজনের লাশ দাফন করা হয়। দুর্ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবীর পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা পেতে সরকারের কাছে দাবী স্বজনদের।
এদিকে শনিবার রাতে ৪ জনের লাশ এলাকায় আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহতদের দেখতে আসা কেউই কান্না ধরে রাখতে পারেননি। স্বজনদের পাশাপাশি কেঁদেছেন অনেকে।
ছোট বোন খাদিজার বিয়ের উৎসবে যোগ দেয়া হলনা বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহত জামসেদার। ফেরার কথা ছিল শুক্রবার, ফিরেছেন শনিবার সকালে লাশ হয়ে। শুধু জামসেদা একাই নয় তার সাথে এই মৃত্যু মিছিলে যোগ দিয়েছেন স্বামী দেলোয়ার, তাদের ছেলে জোনায়েদ, ভাইয়ের বৌ সাহিদা ও দুই শিশু সন্তান মীম ও মাহি। একই সাথে পরিবারের ৬ সদস্যের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
কিরণনগর স্কুল মাঠে দেলোয়ার ও তার ছেলে জুনায়েদ এবং নৌকাডুবির ঘটনায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি শাহ জালালের দুই মেয়ে মিম ও মাহি এর জানাজা পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ আজ রোববার উদ্ধারকৃত শাহ জালালের স্ত্রী সাহিদার মরদেহ আজকের মধ্যেই গ্রামের বাড়িতে আসবে বলে জানিয়েছে স্বজনরা।
এর আগে গতকাল শনিবার দাফন হয়েছিল জামসেদা বেগমের। দুর্ঘটনায় নিহত দেলোয়ার ও জামসেদার মেয়ে জাকিয়া (৪) দেশের বাড়িতে থাকায় সে বেঁচে যায়। তার দেখ-ভাল ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিজ বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কিরণনগর গ্রামে আসার পথে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয় জামসেদার পরিবারের ৬ জন। বড় ভাই শাহজালালকে উদ্ধার করা হলেও লঞ্চের পাখার আঘাতে দু পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে। নিখোঁজদের মরদেহ ফিরে পেতে এবং শাহজালালের উন্নত চিকিৎসাসহ দরিদ্র পরিবারটির জন্য আর্থিক সহায়তার দাবী জানিয়েছে স্বজনরা।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমে মাসুম বালা বলেন, উপজেলা পরিষদ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটির পাশে আছে এবং থাকবে। আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে একটি ঘর নির্মাণ সহ তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব। এই নৌকা ডুবির ঘটনা একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। একটি দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটি শেষ হয়ে গেল। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আরও সোচ্চার হয়ে আগামী দিনে জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক লাশ দাফন ও অন্যান্য খরচের জন্য ২০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। আমরা সরকারি বিধি মোতাবেক নিহত জমাসেদার বেঁচে থাকা এক মাত্র মেয়ে জাকিয়ার লেখাপড়ার খরচসহ একটি ঘর তৈরী করে দেয়া হবে। এছাড়াও আমি আমার নিজস্ব উদ্যোগে আশ্রয়হীন মেয়েটির সার্বিক দেখাশুনার ব্যবস্থা করব।