প্রধান নির্বাচন কশিনার (সিইসি) কে এম নূরল হুদা’র ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সুযোগ’ সংক্রান্ত বক্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি বলেছে থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
সিইসি শুক্রবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বলেন, ‘‘জেলা-উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে দূরে ভোটকেন্দ্র হয়। এ কারণে আগের দিন এসব কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাঠাতে হয়। এখানে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু যদি ইভিএমে ভোটের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে আর ভোটের আগের দিন রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার সুযোগ থাকবে না।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘যখন সমাজের মধ্যে অনিয়ম ঢোকে তখন তা প্রতিহত করতে পদক্ষেপ নিতে হয়। এ কারণে কমিশন ভাবছে ইভিএমে ভোট নেওয়া শুরু করবে।”
সিইসি নির্বাচন নিয়ে ঐ অনুষ্ঠানে আরো অনেক কথা বললেও আলোচনা চলছে ‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার সুযোগ’ সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে। সিইসি এখনো তার বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
তবে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘সিইসির বক্তব্যে থলের বেড়াল বেরিয়ে গেছে। মিডনাইট নির্বাচন (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) যে হয়েছে, তা উনার (সিইসি) কথার মধ্য দিয়েই বেরিয়ে এসেছে। অর্থাৎ ইভিএম নেই বলে মিডনাইট নির্বাচন তো হয়েছে, এটাই তো স্পষ্ট। উনার মুখ দিয়ে ও উনার আরেক কমিশনারের মুখ দিয়ে অজান্তে সত্য কথাটাই বেরিয়ে এসেছে৷ সত্যকে চাপা রাখা যায় না।”
রিজভী আরো বলেন, ‘‘প্যান্ডোরার বাক্স থেকে এখন আসল ঘটনাগুলো বের হতে শুরু করেছে। থলের বেড়ালকে আর বেশিদিন আটকে রাখতে পারলেন তিনি। মিডনাইট নির্বাচনের আসল সত্যটি এখন সিইসি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন।”
‘‘আপনার (সিইসি) এই বক্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকল জাতির কাছে যে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে কী করে মধ্যরাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন,” বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ করেছিল। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার ও নাকোচ করে দেন৷
দুই দলের দুই নেতা যা বলেন:
সিইসির বক্তব্য নিয়ে বিএনপি’র ভাইস চেয়ানম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘সিইসি দেরিতে হলেও সত্য স্বীকার করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ ডিসেম্বর রাতেই হয়ে গেছে। এখন তার উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগ করা।”
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারেরও উচিত পদত্যাগ করা। কারণ তারা আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আছেন। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো বৈধতা নেই।”
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘‘সিইসি কোন প্রেক্ষাপটে এবং কোন অবস্থায় ওই কথা বলেছেন তা বিবেচনা এবং তার পুরো বক্তব্য না শুনে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে আমার মনে হয় আমাদের দেশে নির্বাচন হলেই যারা পরাজিত হয় তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কারচুপিসহ নানা ধরনের অভিযোগ করে। সিইসি হয়তো বলতে চেয়েছেন ইভিএম হলে এই ধরনের অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না।”
তদন্ত চান সাবেক নির্বাচন কমিশনার:
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন মনে করেন, ‘‘সিইসি হয়তো ইভিএম-এর বৈধতার জন্য আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা বলেছেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে আগের নির্বাচনে এরকম হয়েছে কিনা। কারণ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা নিয়ে অভিযোগ এবং ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশনের কাজ হল এটা নিয়ে তদন্ত করা। তারা তো আর পরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থাকবেন না। তাদের এই তদন্ত প্রতিবেদন ধরে তখন যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তারা ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আর যদি তদন্তে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে আইন ও সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সূত্র : ডয়েচে ভেলে।