নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ফের রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে বাম-ডানসহ সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে ‘বৃহৎ মোর্চা’ গঠনের পরিকল্পনা করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আসন্ন রমজানের মধ্যেই মোর্চা গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলে জানা গেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বেশ কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দল এবং একাধিক ইসলামী দল রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠলে এরা যোগ দিতে পারে বলে ইতোমধ্যে আভাস পাওয়া গেছে।
ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের একাধিক ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ‘নানামুখী চাপ’ সত্ত্বেও প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। গণতন্ত্রমনা সব দলকে সাথে নিয়ে তিনি নতুন করে পথ চলতে চান।
ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানান, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্ট তার লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই ফ্রন্ট আরো বেশি শক্তিশালী হবে। ওই নেতা জানান, ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পর গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ফ্রন্টের ‘লক্ষ্য’ ও ‘বার্তা’ অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সুলতান মনসুরের শপথের দিকে ইঙ্গিত করে ড. কামাল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে, ‘মানুষের মাথা কেনা যায় না, গরু-ছাগলের মাথা কেনা যায়। যারা গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়, তারা দালাল হিসেবে পরিচিত।’
ফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা উত্তরণে ফ্রন্ট ও বিএনপির বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ না হলে আওয়ামী লীগ সরকার ‘প্রবর্তিত নির্বাচনের ধারা’য় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করছেন। এমন একটি অবস্থায় আপনা-আপনিই বৃহৎ রাজনৈতিক মোর্চা গড়ে উঠবে।
জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার রয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে এসব দলের মধ্যে সিপিবির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান, বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মুবিনুল) নেতা মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, সুধাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু এবং সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাম নেতারা গণশুনানিতে না গেলেও তাদের সাথে কর্মসূচি পালনের ঐক্য গড়ে উঠতে পারে বলে ফ্রন্টের এক নেতা জানান।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতা বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে ভবিষ্যতে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠলে তখন ঐক্য হতেই পারে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সব আসনে হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের। সারা দেশে দলটির নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনে রয়েছেন। জানা গেছে, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ এ রকম আরো কয়েকটি দলকেও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হতে পারে।
বিএনপির শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন, রমজানের মধ্যেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে নতুন প্রস্তাবনা দেয়া হতে পারে। তারা আশা করছেন, সরকার মেয়াদ পূরণের আগেই সব রাজনৈতিক দলের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।
জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে নতুন কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে আরো কী কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকও রয়েছে আজ। বৈঠকে দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
এ দিকে ইভিএমে ভোট হলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা সম্ভব হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সিইসি কে এম নূরুল হুদা প্রকারান্তরে নির্বাচনে ভয়াবহ অনিয়মের কথাই স্বীকার করে নিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্যান্ডোরার বাক্স থেকে এখন আসল ঘটনাগুলো বের হতে শুরু করেছে। থলের বেড়ালকে আর বেশি দিন আটকে রাখতে পারেননি নূরুল হুদা। মিডনাইট নির্বাচনে আসল সত্যটি তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া দস্যুতারই নামান্তর। জানা গেছে, সিইসির এই বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকারোক্তি হিসেবে নিয়ে বিএনপি শিগগিরই তা বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরবে।