যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরাইলীরা। সম্প্রতি জানা গেছে তাদের অন্য রকমের নৃশংসতার কথা। ইসরাইলের ওষুধ ও অস্ত্র পরীক্ষার জন্য ফিলিস্তিনি বন্দি ও শিশুদের তারা গিনিপিগের মতো ব্যবহার করে থাকে।
জানা গেছে, ইসরাইলের বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তাদের ওষুধ ফিলিস্তিনি ও আরব বন্দিদের ওপর পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইসরাইলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাদের শালহুব-কেভরকিয়ানের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য সিয়াসাত এ চাঞ্চল্যকর তথ্যটি প্রকাশ করে।
শালহুব কেভরকিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া এক বক্তব্যে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রজেক্টে কাজ করার সময় বিষয়টি জানতে পারেন। ফিলিস্তিনি বন্দি ও বসতিগুলোকে ইসরাইলিরা গিনিপিগের মতোই ব্যবহার করে থাকে।
শালহুব বলেন, ইসরাইলি ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধের প্রথম টেস্ট এখন ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপরই করে। ওই ওষুধের মানবদেহে কী রকম হচ্ছে, কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে, তারা এভাবে সহজেই দেখতে পারছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর মতো দেশটির সেনাবাহিনীও তাদের নতুন অস্ত্র, বোমাগুলোর পরীক্ষা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর। অস্ত্রের পরীক্ষা চলছে পূর্ব জেরুসালেমের ফিলিস্তিনি বসতিগুলোর ওপরও। গ্যাস বোমা, গন্ধ বোমাসহ বোমার সব ধরনের কার্যকারিতাই পরীক্ষা করে থাকে ইসরাইলি সেনারা।
গত সপ্তাহে ইসরাইলের কারাগারে মারা যাওয়া ফারেস বারৌদের লাশ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় তেলআবিব। ফারেস কারাগারে বিভিন্ন রোগের শিকার হয়েছিলেন। তার পরিবার আশঙ্কা করছে, হয়তো ফারেস ইসরাইলি ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন পরীক্ষার শিকার হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে ইসরাইল ভয় পাচ্ছে, যদি তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে ফরেনসিক ময়নাতদন্তে হয়তো বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যাবে।
সম্প্রতি ফারেসের মৃত্যুতে বিষয়টি আবারো সামনে আসে। তবে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ওষুধ ও অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ অনেক পুরোনো। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষও বিষয়টি স্বীকার করেছে। ১৯৯৭ সালের জুলাইতে ইসরাইলি পত্রিকা ইয়েডিওথ আহরোনথ-এ একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এ ধরনের পাঁচ সহ¯্রাধিক টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। সে সময় ইসরাইলের তৎকালীন পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান ডালিয়া ইতজিক বলেছিলেন, নতুন উৎপাদিত ওষুধ ফিলিস্তিনি বন্দিদের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মগুলোকে অনুমতি দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে বিষয়টি তেমন আলোচনায় আসেনি।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের আগস্টে বেলজিয়ামের বাণিজ্য জোট অ্যাকোডের সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব রোব্রেচট ভ্যানডেদবেকেন গাজাবাসীকে সতর্ক করে বলেন, সেখানকার লোকজন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে ছুরিকাঘাতে, বিষ প্রয়োগে মারা যাচ্ছে। সেই সাথে মানবদেহের অঙ্গ চুরির জন্য শিশুরা অনেক বেশি হারে অপহরণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মানসুর অভিযোগ উত্থাপন করেন। তিনি বলেছিলেন, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনিদের শরীরে চোখের কর্নিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল না। এ অবস্থায় নিহতদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
সূত্র : সিয়াসত ডেইলি, মিডলইস্ট মনিটর