ফেসবুক বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ, বিশেষ করে টিনেজাররা এতে বুদ হয়ে থাকছে। এর মধ্য দিয়েই হয়তো কখনো ফাঁস হয়ে যাচ্ছে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কিছু তথ্য, ছবিসহ আরো কিছু বিষয়। যা পরবর্তীতে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে ইউজারকে।
গত বছর ফেসবুকের এ বিষয়টি নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন জাকারবার্গকেও এ ব্যাপারে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, ফেসবুকের প্রাইভেসি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের তথ্য সারা দুনিয়ার সাথে শেয়ার করার বিষয়টিকে আজকাল আর ফ্যাশন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। বরং অচেনা দুনিয়ার সামনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার বিষয়টিকে এখন বোকামি আর সেকেলেই হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
সেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জায়গা থেকেই ফেসবুকের ‘ফেস রিগকনিশান’ বা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চেহারা চিনে ফেলার প্রযুক্তির সমালোচনা চলছে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিটিকে ব্যক্তির মুখ চিনে ফেলার বিষয়টিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করছেন ক্যাম্পেইনার বা প্রচারণাকারীরা। ফলে পরিস্থিতির চাপে ফেসবুকের গোপনীয়তার নীতিতে সামনেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি নিজের একটি ব্লগ পোস্টে এ বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ফেসবুকের আলাপচারিতাকে আরো বেশি ইনক্রিপশান বা গোপনীয়তার নীতির আওতায় আনতে চাচ্ছেন।
জাকারবার্গ বলেন, দুই ব্যক্তি ফেসবুকে যে চ্যাট করবেন বা বার্তা আদান-প্রদান করবেন সেগুলো ভবিষ্যতে এনক্রিপটেড থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাওয়ার বিভাগের ড. মার্টিন মুর বলেছেন, জাকারবার্গ হয়তো চীনের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, চীনে উইচ্যাট নামের যোগাযোগের যে অ্যাপটি রয়েছে সেটির ব্যবহার করতে হলে এখন একটি নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। উই চ্যাটের এখন গ্রাহক ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি।
বিজ্ঞাপন না নিয়েও যে এ পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন করা যায় সে বিষয়টিই এখন হয়তো ফেসবুককে আকর্ষণ করছে বলে মনে করছেন ড. মার্টিন মুর।
তবে, ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। চেহারায় বা চুলে খুব সামান্য একটুখানি হেরফের আনলেই ফেসবুক রিকগনিশন প্রযুক্তিকে খুব সহজেই ফাঁকি দেয়া যায় বলেও মত তুলে ধরেছেন অনেকে।
এই বিষয়ে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালের ফ্রেডরিক কালটিওনার বলছেন, নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি দুই ধরনের প্রশ্নের জন্ম দেয়। এরমধ্যে এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার কতখানি বিশ্বাসযোগ্য সেটি হচ্ছে একটি প্রশ্ন। আর আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, এ প্রযুক্তির ব্যবহার আদৌ যথার্থ কিনা? এসব প্রশ্নের কারণেই ফেসবুক রিকগনিশন প্রযুক্তি নিয়ে এখন সাধারণের মাঝেও বিতর্ক চলছে।
সূত্র : বিবিসি