আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মসজিদে ছাত্রলীগের প্রচারণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল শুরু থেকেই। এরই মধ্যে শুক্রবার জুমা নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে দাড়িয়ে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলের জন্য ভোট চাওয়াতে আবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

আচরণবিধি ধারা ৫ (ছ) বলা হয়েছে, কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় (যেমন-মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদিতে) কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।

এসব কিছুর পর নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এর আগে গত বুধবার দুপুরে আচরণবিধি ধারা ৭ লঙ্ঘন করে তারা অপরাজেয় বাংলার সামনে মঞ্চ তৈরি করে প্যানেল পরিচিতি সভা করেছে।

মসজিদে প্রচরণার বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী গোলাম রব্বানী ব্যস্ত আছি বলে ফোন রেখে দেন।

প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য সমর্থিত প্যানেলের মনোনীত ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী জানান, আমরা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। আজকেও (শুক্রবার) তারা মসজিদের মাইকে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু তারা বারবার আমাদের অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছেন। যেখানে অভিযোগের পর প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সেখানে ১১ তারিখের নির্বাচনে সাধারণ ছাত্রদের ইচ্ছার প্রতিফলন কতটুকু হবে সেটাই প্রশ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের ডাকসু নির্বাচনে একমাত্র ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন সংগঠন পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেননি। মেয়েদের পাঁচটি হলে কোন প্যানেলই দিতে পারেনি ছাত্রদল। জানতে চাইলে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক জানান, অনেকের ইচ্ছা থাকলে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ভয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস করেনি। আবার অনেকে স্বতন্ত্রভাবে দাড়ালেও ছাত্রলীগ বাধ্য করে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, বিজনেস ফ্যাকাল্টিসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থানে ছাত্রলীগের মনোনীত প্যানেলের প্রতিশ্রুতি সম্বলিত কাঠের ফ্রেমে রঙিন ডিজিটাল ব্যানার সাঁটানো রয়েছে। অছাত্র ও বহিরাগতদের দিয়েও প্রচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে সংগঠনটি বিরুদ্ধে।

নির্বাচনী আচরণবিধি ধারা ১৫(ক) তে বলা হয়েছে-নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে স্বপ্রণোদিতভাবে তাংক্ষণিত ব্যবস্থা ও গ্রহণ করতে পারবেন।

(খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য কোনো দন্ডে দন্ডিত হবেন।

জানতে চাইলে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, আচরণবিধি নেমে চলা সব প্রার্থী এবং ভোটারের ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য। কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী , কর্মীদের নির্যাতন, চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হলে ও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়ার নজীর নেই নির্বাচন কমিশনের।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top