পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা কোথায় পর্যন্ত গিয়ে থামে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বিমান হামলা-পাল্টা হামলার পর্ব শেষ হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে। কিন্তু এরপর ভারতীয় সাবমেরিনের পাকিস্তানি পানিসীমায় অনুপ্রবেশ এবং ভারতীয় নৌপ্রধানের পানিপথে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে সতর্কবাণীতে মনে হয় বড় ধরনের কোনো আঘাত বা পাল্টা আঘাতের শঙ্কা রয়েই গেছে। সেটি স্থল, নৌ অথবা বিমান যেকোনো মাধ্যমেই হতে পারে।
দুই দেশের এ বাগ্যুদ্ধ এবং সঙ্ঘাতে এ পর্যন্ত যে বাস্তব অ্যাকশন হয়েছে তাতে কোনো পক্ষ চূড়ান্তভাবে জয়ী এ কথা বলার অবকাশ নেই। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার ব্যাপারে ভারতীয় যুদ্ধ বিশারদদের ধারণা সঠিক ছিল না বলে মনে হয়। আর এ দু’দেশের যুদ্ধক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা সামর্থ্যরে মধ্যে ইতোমধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। এই ভারসাম্যই দু’পক্ষের মধ্যে একে অন্যকে আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত করতে পারে।
আশঙ্কার বিষয় হলো- যুদ্ধ সব সময় পরিকল্পনা অনুসারেই সংঘটিত হয় না। অনেক সময় পার্শ্ব-অভিনেতাদের ভূমিকাও রণহুঙ্কার বাজিয়ে দেয়। পাক-ভারত যুদ্ধের ব্যাপারে বড় শঙ্কাটি এখানেই। ব্রিটিশ পত্রিকা ইনডিপেন্ডেন্ট-এর মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি রবার্ট ফিস্ক, পাক-ভারত উত্তেজনার ব্যাপারে একটি তাৎপর্যপূর্ণ নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার পুরো ঘটনার সাথে ইসরাইলি অপারেশনের অদ্ভুত মিল প্রত্যক্ষ করেছেন। ইসরাইলের সাথে গত দেড় দশকে ভারতের সম্পর্ক অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। দু’দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিপক্ষ দেশ সফর করেছেন। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কয়েক দিনব্যাপী ইসরাইল আর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ভারত সফর করেছেন। দু’দেশের মধ্যে সরকারপ্রধান পর্যায়ের এটি সম্ভবত প্রথম সফর।
এই সফরে কৃষি ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তার পাশাপাশি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরক্ষা খাতে তাৎপর্যপূর্ণ সহায়তা চুক্তি হয়েছে। মোদি তার বক্তব্যে ভারতের কাশ্মির ও ইসরাইলের ফিলিস্তিন সঙ্কটের প্রতি ইঙ্গিত করে দুটোকে একই ধরনের সন্ত্রাসী সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। দুই নেতার পুরো সফরকালীন অনুষ্ঠান ও চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, উভয় দেশের নেতারা সভ্যতার দ্বন্দ্বে দুই দেশকে একই পক্ষের মিত্রশক্তি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক যুদ্ধ উত্তেজনাকে দু’দেশের বিরোধ নিষ্পত্তি থেকে উৎসারিত কোনো ঘটনা হিসেবে দেখলে এর গভীরতা হয় একরকম। কিন্তু এটাকে সভ্যতার দ্বন্দ্ব হিসেবে মূল্যায়ন করে কৌশল ঠিক করা হলে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা নেয়। সাধারণভাবে যেটি মনে করা হয় তা হলো- নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ও তার দল ভারতীয় জনতা পাার্টির আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য একটি উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগিয়ে তোলা দরকার। সে জন্য এই যুদ্ধোন্মাদনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বক্তব্যে একাধিকবার এই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও মমতা ব্যানার্জির মতো শীর্ষ বিরোধী নেতারা রাজনৈতিক স্বার্থে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন।
এসবে মনে হয়, ভারতের যুদ্ধংদেহী অবস্থা সৃষ্টির জন্য বিজেপি সরকারের একটি রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। কিন্তু বিষয়টির গভীরতা সম্ভবত এর চেয়েও বেশি। তুর্কি দৈনিক ইনি সাফাকের সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুল পাক-ভারত যুদ্ধের পেছনে ভিন্ন একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন, পাক-ভারত যুদ্ধ এখনি কেন? তার পর্যবেক্ষণ অনুসারে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ এবং জিংজিয়াং বা পূর্ব তুর্কমেনিস্তানে উইঘুর মুসলিমদের ইস্যুতে চীনা সরকারের সাথে যে সঙ্ঘাত সেটি ভারতীয় ও চীনা সভ্যতার সাথে ইসলামী সভ্যতাকে মুখোমুখি করার একটি আয়োজন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সভ্যতার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে মুসলিমদের সাথে ইহুদি-খ্রিষ্টান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের মুখোমুখি অবস্থা সৃষ্টির এ প্রয়াসের শেকড় অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। অনেক জনপদেই স্বাধীনতা, স্বাধিকার অথবা বেঁচে থাকার গোষ্ঠীগত অধিকারের বিষয়টি বেশ যৌক্তিক। কিন্তু এসব যৌক্তিক আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার- চেতনা এবং ন্যায়বিচার বোধকে ব্যবহার করে অনেক দেশ ও জাতিকে ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করা হয়েছে। সঙ্ঘাত লাগিয়ে দেয়ার জন্য যারা একসময় উসকানি দেয় যুদ্ধ বা সঙ্ঘাত লেগে যাওয়ার পর তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। মধ্যপ্রাচ্যে আরব জাগরণের পথ ধরে মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়ায় যা হয়েছে এবং হচ্ছে তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এর অনেক কিছু স্পষ্ট হবে।
স্যামুয়েল পি হান্টিংটনের সভ্যতার সঙ্ঘাত তত্ত্বটি গত কয়েক দশক ধরে ছিল বেশ আলোচিত। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর হান্টিংটনের এ তত্ত্ব দিয়ে পাশ্চাত্যের সামনে ইসলামিক সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আসা হয়। হান্টিংটনের এই তত্ত্বকে পরে এডওয়ার্ড সাঈদসহ বেশ ক’জন লেখক পাল্টা বক্তব্য দিয়ে খণ্ডন করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পাশ্চাত্যের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে সেটি এতটাই গভীরে প্রোথিত হয় যে, পরের কয়েক দশকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই’-এর নামে বৈশ্বিকভাবে যা হয়েছে তার পরিণতি অত্যন্ত নৈরাশ্যজনক। এ লড়াইয়ের শিকার জনপদগুলোকে অবলোকন করলে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিধর কয়েকটি দেশ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন এখন ক্ষতবিক্ষত। এ দেশগুলো রাষ্ট্র হিসাবে কতটা দাঁড়াতে পারবে- সেটিই এখন প্রশ্নের মুখে। এর বাইরে আঞ্চলিকভাবে শক্তিমান দেশ সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর এবং সুদানেরও রয়েছে নানা সমস্যা। হয়তো বা নিজ দেশের জনগণের সাথে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হয়েছে অথবা আঞ্চলিকভাবে শক্তিমান এক দেশকে অন্য দেশের সাথে সঙ্ঘাতে লাগিয়ে রাখা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দুরবস্থার জন্য জাতীয় বা আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবশ্যই দায় রয়েছে। তবে এর পেছনে সূক্ষ্মভাবে কাজ করছে ইসরাইল। উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরিতুল্য পরিস্থিতিতেও মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিমান দেশ হলো পাকিস্তান। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে সানফ্রান্সিসকোতে এক আমেরিকানের বাসায় ছয়জন সিনিয়র আমেরিকান নাগরিকের এক নৈশভোজ অনুষ্ঠানে একজনের কথা আমার এখনো কানে বাজে। তখন সাদ্দাম হোসেনের গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখায় সেনা অভিযান চালানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনা তুঙ্গে। সেই সভায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র আমেরিকান নাগরিক বলেছিলেন, বিশ্বের কাছে ইরাকের চেয়েও বড় হুমকি হলো পাকিস্তান। কারণ তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এই নৈশভোজে বাংলাদেশী সাংবাদিক প্রথম আলোর সে সময়ের বিজনেস এডিটর শওগাত আলী সাগরও ছিলেন।
এরপর দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ইরাক দখলসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। এর আগের কিছু ঘটনাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর এর প্রজাতন্ত্রগুলো স্বাধীন হয়ে যায়। এ সময় রাশিয়ান ফেডারেশনের কয়েকটি ককেশাস অঞ্চল স্বাধীনতা বা অধিক স্বায়ত্তশাসন চায়। এর মধ্যে চেচনিয়ার সংগ্রাম একপর্যায়ে সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ লাভ করে। দাগেস্তানসহ আশপাশের কয়েকটি প্রজাতন্ত্রেও এর রেশ ছড়িয়ে পড়ে। এর পেছনে নানাভাবে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের। পুতিন ক্ষমতায় আসার পর নির্মমভাবে এই বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করেন। কিন্তু রাশিয়ার মতো একটি বিশ্ব শক্তির সামনে মুসলিম হুমকি নেতৃত্বের মানসপটে বেশ বড়ভাবে থেকে যায়। সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের পেছনে অন্য অনেক কারণের মধ্যে একটি ছিল চেচনিয়ার সেই স্বাধিকার সংগ্রাম। তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে অনেক চেচনিয়াও ছিল।
এখন এর কাছাকাছি এক অবস্থা চলছে উইঘুর অধ্যুষিত চীনের জিং জিয়াং প্রদেশে। উইঘুর মুসলিমদের প্রতি যে বৈষম্য ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক এক ধরনের নিপীড়ন চলছে তার মধ্যে অসত্যের কিছু নেই। কিন্তু কিছু উইঘুর মুসলিমকে স্বাধীনতার জন্য প্রচার-প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমে মুসলিম শক্তিগুলোর সাথে চীনের এক ধরনের অবিশ্বাসের সম্পর্ক সৃষ্টির প্রয়াস রয়েছে। সার্বিক বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় রাশিয়া ও চীনের মতো দুটি বিশ্ব শক্তিকে মুসলিম সভ্যতার প্রতি বৈরী করে তোলা, কোনো মুসলিম দুনিয়ার জন্য সুকৌশলের কাজ নয়।
কাশ্মিরের ইস্যুটি অত্যন্ত সংবেদনশীল পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশের জন্যই। দেশ বিভাগের মধ্যে এই সঙ্কটের বীজ নিহিত রয়েছে। বিজেপি সরকার গত পাঁচ বছরে যেভাবে এ সঙ্কটকে মোকাবেলা করেছে, তাতে সমস্যাটিকে অনেক জটিল করা হয়েছে। আর এ সময়টাতে ভারতের সাথে ইসরাইলের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সর্বব্যাপী রূপ নেয়।
গত এক দশক ধরে ইসরাইলের সাথে ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হতে শুরু করেছে। বিশেষভাবে গত পাঁচ বছর কাশ্মিরের স্বাধিকারকামীদের দমন কৌশল অনেকখানি ইসরাইলি পরামর্শক ও সহায়তা নির্ভর হয়ে গেছে। এর আগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করতে পেলেট গান ব্যবহার অথবা যখন তখন নির্বিচারে গুলি করে মারার দৃষ্টান্ত ছিল না। এখানে যে অপারেশন এখন চলছে, তার সাথে ইসরাইলের ফিলিস্তিন অপারেশনের মিল খুঁজে পেয়েছেন রবার্ট ফিস্কের মতো ব্যক্তি।
এই বিষয়টিই হলো সবচেয়ে বড় উদ্বেগের। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়ার সবচেয়ে উর্বর ক্ষেত্র হলো কাশ্মির। এখানে অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে ঠেলে দিয়ে দুই দেশকে যুদ্ধে জড়ানোরই চেষ্টা হচ্ছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালাকোটে অভিযান এর একটি অংশ হতে পারে। এখন বিজেপি ও মোদির নির্বাচনের সাফল্যের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে পাকিস্তান আক্রমণ বা কাশ্মিরে বিপর্যয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে সাফল্য যতটা দূরে যাবে, ততটাই বেপরোয়া হতে পারে মোদি ও তার রাজনৈতিক সহযোগীরা। ভারতের সাথে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ব্যবসায় চুক্তিবদ্ধ ইসরাইল তাতে মদদ দিতেই পারে।
পাকিস্তান ও ভারত দু’দেশেই যুদ্ধে না জড়ানোর ব্যাপারে ব্যাপক জনমত ও বিশেষজ্ঞ বক্তব্য থাকার পরও দুই পারমাণবিক শক্তির মধ্যে যুদ্ধ প্রলয়ঙ্করী রূপ নেয়ার আশঙ্কা এখানেই। ২০০৬ সালে পাকিস্তানকে চার ভাগে বিখণ্ড করার যে পরিকল্পনা মার্কিন ডিফেন্স জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছিল, তার সাথে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এ জন্য রাষ্ট্রিক বিরোধকে ইসলামী সভ্যতার সাথে ইহুদি-খ্রিষ্টান-হিন্দু-চৈনিক সভ্যতার দ্বন্দ্ব সৃষ্টির একটি সন্তর্পণ প্রচেষ্টা চলছে। ইব্রাহিম কারাগুলের ইঙ্গিত ছিল এর প্রতি। তিনি এও বলেছেন ভারত ও চীনের সাথে কোনোভাবেই মুসলিম বিশ্বের যুদ্ধে জড়ানো উচিত হবে না। মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিষয়টি সম্ভবত উপলব্ধি করতে পারছেন। যার কারণে পাক-ভারত উত্তেজনা যাতে যুদ্ধে রূপ না নেয়, তার জন্য তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের পরিণামদর্শী অনেক নেতাই ধ্বংসকারী এ ফাঁদে দু’দেশের জনগণকে ফেলতে চাইছেন না। যদিও বেশির ভাগ ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকা উসকানিমূলক।
এ ব্যাপারে আমেরিকান পলিসি পেপারে এক লেখায় বৈষ্ণবী চন্দ্রশেখর দুঃখ করে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তান যদি কখনো তাদের দ্বন্দ্বকে সমাধান করে, তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের এ ক্ষেত্রে ধন্যবাদ পাওয়ার কোনো কারণ থাকবে না। ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামা শহরে আত্মঘাতী হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ার অনেকের মতো অনেক ভারতীয় টেলিভিশন নিউজ নেটওয়ার্ক এমনভাবে খবর প্রচার করেছে, তারা যেন রক্তের জন্যই বেঁচে আছেন। ভারত এই হামলার জন্য দায়ী জইশ-ই-মোহাম্মদকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে।
হামলার পরের দিনই একজন বিখ্যাত সংবাদ অ্যাঙ্কর অর্নব গোস্বামীকে গর্জন করে বলতে শোনা যায় ‘আমরা প্রতিশোধ চাই, নিন্দা নয়। … এটা হলো রক্ত নেয়ার সময়, শত্রুর রক্ত’। এমনকি হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাকিস্তানিদের সাথে শান্তিপূর্ণ সংলাপ করার পক্ষে কথা বললে নিহত সেনাদেরই একজনের স্ত্রী মিতা সান্ত্রার ওপর অনলাইনগুলো আক্রমণ চালায়। কিছু অনলাইন তাকে ভীরু-কাপুরুষ বলে চিহ্নিত করে। অন্যরা বলে, সে আসলে তার স্বামীকে ভালোবাসেই না।
mrkmmb@gmail.com