‘ক্ষমতার সাধ পেতে’ অনেক বামপন্থি অবস্থান বদলেছেন; যদিও মুক্তিযুদ্ধকালে নানা প্রসঙ্গে বিরুদ্ধ অবস্থান নিয়ে ছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের ওপর একক বক্তৃতায় এই মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘কিছু ভাষ্যকারও সব বিষয়ে মুজিব বিরোধী দোষারোপ করেন যে, ৭ই মার্চের ভাষণে প্রকারান্তরে না করে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল।’
‘আমার বামপন্থি বন্ধুদের বেশিরভাগই কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে বলেছেন। আজকে অবশ্য তারা বোল পাল্টিয়েছেন ক্ষমতার একটু সাধ পাওয়ার জন্য। তাদের আর নাম না বললাম।’
বাংলা একাডেমির আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন।
বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হিসাব নিকাশ করেই প্রত্যক্ষ ঘোষণাটি দেন নাই। কারণ শতকরা ৫৬ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় না। সর্বোপরি সারা পৃথিবীতে বিচ্ছিন্নতাবাদীকে কেউ আমল দেয় না। সে অপবাদ বঙ্গবন্ধু নিতে চান নাই। নিতে হয়ও নাই।’
‘পাকিস্তান ভাঙার দায় পশ্চিম পাকিস্তান তথা সেনা শাসককূলের উপরই পড়েছিল। সারা দুনিয়াতে বাঙালির ন্যায়ানুগ দাবির প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জেগে ওঠে।’
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফরাসউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালে এ ১৮ মিনিটের ভাষণটি তার স্বভাবসুলভ তাৎক্ষণিক বক্তব্য ছিল, পূর্বে তৈরি করা বক্তৃতা নয়। এটিকে অনেকেই রাজনীতির কবিতা বলে থাকেন। তুলনা করা হয় আব্রাহাম লিংকন, উইনস্টন চার্চিল, মার্টিন লুথার কিং ও পেরিক্লিসের মহতী যুগান্তকারী ভাষণগুলোর সাথে।
‘এর মহত্ত্ব ও বিরাটত্বের কারণে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অসাধারণ ভাষণটিকে পৃথিবীর অন্যতম ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ভাষণটির অসাধারণত্ব, এর স্বতঃস্ফূর্ততা, নির্ভীকতা, সম্যক উপলব্ধি ও তেজস্বী উচ্চারণ প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জনগণের প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার চরম ও পরম আকাঙ্ক্ষাকে বাঙময় করে তোলে। ভাষণটি অবশ্যই বহুমাত্রিক গুরুগম্ভীর ও ওজনদার- পরোক্ষভাবে নয় অথচ প্রকৃতপক্ষে বাঙালি ও শেখ মুজিবের স্বপ্ন সাধনার স্বাধীনতা ও মুক্তির সুস্পষ্ট উচ্চারণ এটি।
‘সামগ্রিক বিচারে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি স্বাধীনতাকে সংজ্ঞায়িত করেছে, চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জনের দিক নির্দেশনা দিয়েছে, প্রকাশ করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের রূপরেখা- রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা এবং কল্যাণ রাষ্ট্রে বিশেষ করে কম ভাগ্যবানদের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ সোনার বাংলা গড়ে তোলা। দুঃখ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বলিষ্ঠ প্রত্যয় আছে এ ভাষণের বাক্যগুলির অন্তরে অন্তরে।’
ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত আঘাতে বিজয়ের ফসল ঘরে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি- তোমাদের যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে…’।’
বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তৃতা অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী স্বাগত বক্তব্য দেন।