ধর্মাবতার! আমার কিছু প্রশ্ন আছে

আখিরাতের ন্যায়বিচার সম্পর্কে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। এমনকি দুনিয়াতে যেসব বিচার-আচার আসমান থেকে আসে, অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগমন করে, সেগুলো নিয়েও কোনো প্রশ্ন করার ধৃৃষ্টতা নেই। তবে আল্লাহর বান্দারা বিচারের নামে এই জমিনে এমন কিছু করেন যা নিয়ে প্রশ্ন না করলে মানুষ হিসেবে নিজেদের বিবেকবুদ্ধির প্রতিই অবিচার করা হয়। অতীতে মহামতি সক্রেটিসকে পৃথিবীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ আদালত যখন সম্মিলিত সিদ্ধান্তে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, তখন গ্রিসের লোকজন কী কী প্রশ্ন কিভাবে করেছিল, তা আমার জানা নেই- তবে গ্রিকবাসী বিচারের নামে সেই আদিকালের প্রহসন যে কোনোকালে মেনে নেয়নি তার প্রমাণ তারা দিয়েছেন সাম্প্রতিককালেও। সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডের প্রায় আড়াই হাজার বছর পর আধুনিক গ্রিসে পুনরায় সেই দেশের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে একালের বিচারপতিরা রায় দিয়েছেন যে, সক্রেটিসের প্রতি জুলুম করা হয়েছিল এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল অন্যায়ভাবে।

সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ডের প্রায় দুইশত বছর আগে ইরাকের ব্যাবিলন নগরীতে বিরাট এক প্রহসন হয়েছিল। একজন নিরপরাধ সুন্দরী রমণীকে লালসার জালে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে দু’জন বিচারকরা মেয়েটিকে নিজেদের বিচারালয়ে অভিযুক্ত করেন এবং মনগড়া রায় দিয়ে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিলেন। হতভাগ্য মেয়েটির মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে এবং জনসমাবেশে কার্যকর করার সময় উপস্থিত হাজারো দর্শক-শ্রোতা যখন নীরব ছিলেন, তখন একজন যুবক দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- বিশ্বাস করি না যে মেয়েটির ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করা হয়েছে। যুবকের কথাগুলো যেন উপস্থিত জনতার মাঝে বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ ছড়াল। বিচারকদ্বয় তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, ‘কিভাবে তুমি প্রমাণ করবে, ন্যায়বিচার হয়নি।’ যুবক উত্তর দিলেন যে, আমি আপনাদের আলাদা আলাদা করে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।

ঘটনাটি মানবজাতির ইতিহাসের তোলপাড় করা অন্যতম উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ওকালতি উল্লিখিত ঘটনার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এবং এ কাহিনীর যুবককেই পৃথিবীর প্রথম উকিল বলে ধারণা করা হয়। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি মামলার সাক্ষীদের আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত সত্য বের করার যে পদ্ধতি তার নাম ক্রস এক্সামিনেশন। তা সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল আলোচ্য ঘটনার মাধ্যমে। তৃতীয়ত, ইতিহাসে কেবল একবারই বিচারকদের বিচার প্রকাশ্যে হয়েছিল এবং দোষীদের সাথে সাথে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। পৃথিবী তোলপাড় করা ঘটনাটি সুসানা অ্যান্ড দ্য এল্ডার্স শিরোনামে পবিত্র বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি যখন ঘটেছিল তখন ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় নেবুকাদনেজার এবং ঘটনার নায়ক অর্থাৎ যুবকের নাম হজরত দানিয়েল আ:।

‘দানিয়েল’ শব্দটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে ন্যায়বিচারের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। এটি একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ হলো- ‘আল্লাহ আমার বিচারক’। পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সেই আদিকাল থেকে আজ অবধি দেশে দেশে জনপদে এবং পথে-প্রান্তরে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নানা উপলক্ষ সৃষ্টি করে রেখেছেন। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের নজির হিসেবে মানুষের মধ্যকার অতি উত্তম অংশটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। শাসক, বিচারক ও সেনাপতিদের মধ্যে যারা ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের মান-মর্যাদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। আল্লাহ তার ‘রহমান’ নামের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে মানবজাতির প্রতি তার প্রদত্ত রহমতের ফিরিস্তি বর্ণনা করেছেন পবিত্র কুরআনের সূরা আর রাহমানে। এর একদম শুরুতেই অর্থাৎ সাত, আট ও নয় নম্বর আয়াতে সঠিক ওজন, তুলাদণ্ড এবং সীমা অতিক্রম করা সম্পর্কে বলেছেন। আল্লাহ মানুষের মধ্যে যেসব ব্যতিক্রমী গুণ সন্নিবেশিত করেছেন সেগুলোর মধ্যে প্রধান গুণটি হলো- বিবেক। এর অর্থ, বিচারবুদ্ধি এবং প্রতিবাদ করার ক্ষমতা। কোনো মানুষ যদি এগুলো বর্জন করে, তবে সে আর মানুষের পর্যায়ে থাকে না। অন্য দিকে, যারা মানুষের বিবেক, বিচারবুদ্ধি ও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা কেড়ে নেয় তারা কেবল মনুষ্যত্ব বর্জিত হয় না; বরং সরাসরি আল্লাহর কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে বসে।

হঠাৎ করেই হজরত দানিয়েল আ:-এর কথা মনে হলো এ দেশে বিরাজমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। কারণ সে দিন যেভাবে তিনি বুক ফুলিয়ে হাজারো জনতার মধ্যে দাঁড়িয়ে বিচারকদের বলেছিলেন- ধর্মাবতার! আমার কিছু প্রশ্ন আছে; সেভাবে আমাদের মধ্যে কেউ এই ২০১৯ সালের বাংলাদেশে প্রশ্ন করার হিম্মত কিন্তু রাখি না। আমরা বলতে পারি না, গায়েবি মামলা কী, কাকে বলে এবং তা কত প্রকার। আমরা প্রশ্ন করতে পারি না, জেল-জুলুম, মামলা-মোকদ্দমা কার জন্য কিভাবে এবং কখন প্রযোজ্য হয়। আমরা মন্দ লোকদের ঘৃণা করতে অক্ষম; অমানুষদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হই এবং মজলুমকে সাহায্য করা দূরের কথা, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের দুর্ভোগ-দুর্দশা দেখে কৌতুক অনুভব করি। আমরা নিত্যনতুন ভয়, সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বেড়াজালে নিজেদের বন্দী করার জন্য স্বাভাবিক কাজকর্ম বাদ দিয়ে ভয়ের রাজ্যের ‘সিদ্ধিবাবা’ হয়ে মানুষের করুণার পাত্র হওয়ার লক্ষ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা করি। আমরা যেমন নিজেরা ভয় পাই, তদ্রƒপ অন্যকে ভয় পাইয়ে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি।

বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা এবং দৈনন্দিন জীবনে চলছে মুখ বন্ধ রাখার দুর্বার প্রতিযোগিতা। আমরা নিজেদের ওপর কৃত জুলুমকে দ্রুত ভুলে যাওয়ার জন্য যেরূপ চেষ্টা-তদবির করছি, তেমনি অন্যের ওপর চলমান জুলুম থেকে নিজেদের পঞ্চ-ইন্দ্রিয়কে বিমুক্ত ও বিযুক্ত করার জন্য দস্তুরমতো সাধনা শুরু করে দিয়েছি। এ দিকে, পুলিশ ইচ্ছেমতো মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে এবং খেয়াল খুশিমতো অভিযোগ দাখিল করছে। তারা লাখ লাখ মানুষকে বিচারের মুখোমুখি করার নামে কোটি কোটি মানুষের অন্তরে ভয়-সন্দেহ ও অবিশ্বাসের তীর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক ক্রীড়াকর্ম, বিনোদন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ইত্যাদি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমরা প্রশ্ন করতে পারছি না, কেন তারা এসব করছেন অর্থাৎ কাদের হুকুমে কিংবা স্বার্থরক্ষার জন্য ওসব করা।

আমরা প্রশ্ন করতে পারছি না- কেন মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের কবল থেকে কথিত আসামিদের বাঁচানো যাচ্ছে না। অথবা রাষ্ট্রের যে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী মহল বিশেষের একান্ত অনুগৃহীতে পরিণত হয়ে বিচারের নামে অবিচার করে যাচ্ছেন, তা প্রতিকারের কেন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। যারা গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা, হয়রানিমূলক মামলা, প্রহসনের মামলা, রাজনৈতিক মামলা ইত্যাদি দায়ের করে কোর্ট-কাচারি ভরে ফেলেছেন এবং কারাগারগুলোতে মানবেতর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, তাদের দমন করার জন্য কেউ কি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আল্লাহর ওয়াস্তে দৃষ্টান্তমূলকভাবে পালন করতে পারেন না? গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো, বিরোধী দলগুলোর ওপর বেআইনি কর্মকাণ্ডের জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দেশকে বিরাজনীতিকীকরণের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে কি সংশ্লিষ্টদের কিছুই করার নেই? দেশ-জাতি-জনগণের বৃহৎ অংশ এবং বিএনপির মতো দল যদি দুর্ভোগে পড়ে তবে দেশের সুবিধাভোগী শ্রেণী কি দীর্ঘমেয়াদে সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবেন?

প্রথম থেকেই বেগম জিয়ার গ্রেফতার ও কারাবরণ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। কারাগারে নেয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে পথে-ঘাটে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে, এমনকি তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাকে যেভাবে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল, তা সমসাময়িক ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাকে বর্তমানে যেভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে তা পাকিস্তান আমলে ঘোর রাষ্ট্রবিরোধী কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও বরণ করতে হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ বঙ্গবন্ধু অথবা ঢাকার ধানমন্ডির আদি ৩২ নম্বর সড়কে বসবাসরত তার পরিবারের প্রতি হানাদারেরা যতটা সৌজন্য দেখিয়েছিল, তা আজ অবধি কেউ অস্বীকার করতে পারেনি। অথচ পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে পঁচাত্তর বছর বয়সী একজন নারী যিনি বহুকাল আগে থেকে নানা রোগে আক্রান্ত, যিনি স্বামীহারা বিধবা, সন্তানহারা মা এবং বাবা-মা ও ভাইহারা একজন শোকাহত মানবী। বয়সের স্বাভাবিক নিয়মে তিনি ইহজগতের বহির্গমন লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ একজন যাত্রী। সুতরাং তার জীবনের শুভকর্ম, আত্মত্যাগ এবং তিতিক্ষার কথা স্মরণ করে রাষ্ট্র, জনগণ এবং ধর্মাবতারদের বিবেক মানবিক হওয়াই কাম্য। অন্যথায় এমন একটা সময় এই জাতির জীবনে হয়তো আসবে যখন সবাইকে আফসোস করতে হবে।

মাঝে মধ্যে ভাবি, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা তিনি সজ্ঞানে, ইচ্ছে করে এবং নিজের স্বার্থে করেছিলেন কি? তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের, আত্মীয়স্বজনের অথবা প্রিয়জনের পকেট ভারী করার জন্য কোনো অপরাধ করেছিলেন কি না! তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি, তার পরিবার পরিজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং একান্ত নিকটজনের সহায়-সম্পত্তির মধ্যে কোনো রাষ্ট্রীয় অর্থ, ব্যাংক-বীমা-শেয়ার মার্কেট ইত্যাদি লোপাটের অংশ রয়েছে কি না। বেগম জিয়া এবং তার সন্তানেরা রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করে এ যাবৎ দেশে-বিদেশে কয়টি বাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স অথবা বিনিয়োগের পাহাড় গড়ে তুলেছেন : তাকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করার সময় তো পুরো বাড়ির মালামালের সিজার লিস্ট করা হয়েছিল। সেখানে কি কোনো অবৈধ অর্থ, গহনা কিংবা বেআইনি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল?

বেগম জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে এই দেশ-জাতি ও সমাজের জন্য কি কিছুই করেননি? তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের জন্য এবং ব্যক্তিস্বার্থে যদি কিছু না করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো জনগণের মনে এবং বিধাতার দরবারে পাত্তা পাওয়ার কথা না। উল্টো তিনি মহাকালের ইতিহাসে নন্দিত হতে পারে এবং তার বিরুদ্ধ চক্রান্তকারীরা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে পারে। মানুষের আদালতে অনেক কিছু হয় যা সময়ের বিবর্তনে বিপরীত ফল বয়ে আনে। আমাদের ইতিহাসের আগরতলা মামলা, ইলামিত্রের গ্রেফতার, মহারাজ নন্দকুমারের ফাঁসি ইত্যাদি ঘটনাগুলোকে ইতিহাস ক্ষমা করেনি।

বেগম জিয়ার পাশাপাশি তার রাজনৈতিক সহকারী অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস এবং ‘তারেক রহমানের বন্ধু’ বলে পরিচিত গিয়াসউদ্দিন মামুনের কারাজীবন এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা-মোকদ্দমার ন্যায়বিচার নিয়েও ভাবছি। এই দু’জন মানুষের প্রধান ‘অপরাধ’ হলো, তাদের একজন বেগম জিয়ার স্নেহভাজন এবং অন্যজন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ। মামুন সেই কুখ্যাত ‘এক-এগারো’ থেকেই কারাগারে। দীর্ঘ দিন ধরে তাকে আটক রেখে রাষ্ট্রশক্তি তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে যে মামলাটি নিষ্পত্তি করে তার বিরুদ্ধে রায় পেয়েছে, তার সাজার মেয়াদের চেয়েও বেশি সময় ধরে সে কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। জামিন, মুক্তজীবন, ন্যায়বিচার, নিরপেক্ষ আচরণ, রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ ইত্যাদি সবকিছুই কি জন্য অস্পৃশ্য এবং সুদূরপরাহত? কোনো ধর্মাবতার আল্লাহর ওয়াস্তে এমন ব্যক্তির দিকে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সূরা আর রাহমান বর্ণিত ন্যায়দণ্ড বা তুলাদণ্ডের দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করলে পরিস্থিতি কিরূপ হবে, তা হয়তো বিবেকবানেরাই বলতে পারবেন।

শিমুল বিশ্বাসের অবস্থা মামুনের চেয়েও মানবেতর। কারণ তার বিরুদ্ধে ব্যবসা-বাণিজ্য, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির কোনো অভিযোগ নেই। প্রতীয়মান হয়, তার প্রধান ‘দোষ’- তিনি বেগম জিয়ার সার্বক্ষণিক সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। গত এক যুগে তিনি যা করেছেন, তাতে রাষ্ট্র কিংবা ক্ষমতাসীনদের ক্ষয়-ক্ষতি, মান-অভিমান বা ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো প্রত্যক্ষ কারণ ছিল না।

বিএনপির অভ্যন্তরে কেউ কেউ তার প্রভাবের কারণে ঈর্ষান্বিত বা ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্র, সরকার বা ক্ষমতাসীন মহলে বিরাগভাজন হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। বেগম জিয়ার সাথে তিনিও গ্রেফতার হয়েছিলেন এক বছর আগে। এ পর্যন্ত তাকে ১১০টি গায়েবি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ ও বিপর্যস্ত করার জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে অন্তরীণ রেখে ংড়ষরঃধৎু পড়হভরহবসবহঃ-ভোগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। উচ্চতর আদালত থেকে সব মামলায় জামিন লাভ করা সত্ত্বেও তার গায়ে মুক্তির বাতাস লাগেনি। তার বিরুদ্ধে পূর্বেকার ১১০টি গায়েবি মামলার অভিযোগের পাশাপাশি নতুন নতুন পেন্ডিং মামলার চার্জশিটে অভিনব ও নজিরবিহীনভাবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

যতটা বিজ্ঞতা ও মহানুভবতা দেখিয়ে শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত গায়েবি মামলা, পেন্ডিং মামলার এজাহার এবং চার্জশিটে ভৌতিক উপায়ে নতুন করে তার নাম অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে যে আদেশ দেয়া হয়েছে, তার চেয়েও অধিকতর কৌশল, দক্ষতা ও একাগ্রতা দেখিয়ে পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ এবং নিম্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জামিন আটকে দিয়েছেন, যা নিয়ে আমি একটি প্রশ্ন রাখলাম- যারা এ ব্যাপারে ক্ষমতাবান, তাদের কি ব্যতিক্রমী কিছু করার নেই?
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top