এই খানে এক বাজার ছিলো…

পাশাপাশি দুটি এলাকা। দুই এলাকার ছিল দুইটি আলাদা বাজার। একটা চেয়ারম্যান বাজার আর অন্যটি আনন্দবাজার। বাজার মানে কি শুধুই বাজার! ক্রেতাদের চাপে বিক্রেতাদের কাটতো মধুর ব্যস্ত সময়। কিন্তু এই বাজার দুটি এখন শূণ্য। ক্রেতা-বিক্রেতা তো নেই-ই, নেই দোকানপাটের অবশিষ্টও। তাহলে কি হলো এই দুটি বাজারের?

জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় সাহেবালী মাতুব্বর নামে এক ব্যক্তির খুনের ঘটনার জের ধরে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ। প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এই এলাকার দুটি বাজার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম আতঙ্কের মাঝে। ঘটনার পর মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সরেজমিন জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আকনের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই এলাকার সাহেবালী মাতুব্বরের বিরোধ চলে আসছিলো। এই বিরোধের জের ধরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় সাহেবালী মাতুব্বরের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার পর কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে মাদারীপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয় আরো ১০/১৫ জনকে। মামলার পর থেকে সদর উপজেলার পাঁচখোলা ও কালিকাপুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ মামলা হামলার ভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

এই সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সরোয়ার বেপারী, ইয়াকুব মিয়া, সেলিম মাতুব্বর, ওবায়দুল মাতুব্বর, দেলোয়ার মাতুব্বর, আউয়াল মাতুব্বর, নজরুল মাতুব্বর, জসিম মাতুব্বর, শহিদুল ইসলাম, হেমায়েত মোল্লা, বাবুল হাওলাদার, খালেক আকনের বাড়িসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার এবং পাঁচখোলা ইউনিয়নের আনন্দবাজার নামে দুটি বাজার ছিলো। খুনের ঘটনার পরে বাজার দুটি নিশ্চহ্ন হয়ে গেছে। বাজারে দোকারপাটের কোন অস্তিত্ব নেই। রাস্তার পাড়ে দোকানের কয়েকটি খুটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। জনমানব শূণ্য।

রহিমুন নেছা নামে এক বৃদ্ধা বলেন,‘আমার ছেলে বিদেশে থাকে। আমরা মাইর কাইজ্জার (মারামারি) মধ্যে নাই। তবুও রাতে আমাগো বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করে মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আশেপাশের অনেকের বাড়ি ঘরে লুটপাট করেছে। পুলিশও হামলাকারীদের পক্ষ নেয়। যারা খুনের সাথে জড়িত তাদের বিচার হোক। আমাদের মত নিরীহ মানুষের বাড়িঘর কেন ভাঙচুর- লুটপাট করে।’

মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বারেক কমির খান বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি দুই পক্ষকেই শান্ত রাখার। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলিও চালানো হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা চাইলে মামলা দায়ের করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের আইনগত সব ধরণের সহায়তা প্রদান করবো।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন,‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি দুঃখজনক।’

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top