সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছে। তার সাথে আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং গত ৩ মার্চ দুই বার তার আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের জন্য আবেদন করলেও অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা গত দুই মাসে বহু চেষ্টা করেও বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি পাচ্ছেন না। কারাগার কর্তৃপক্ষ বারবার একই কথা বলছেন- ‘হাই লেভেল থেকে অনুমতি না পেলে আমাদের কিছু করার নেই।’
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুচিকিৎসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে উপনীত হলেও তাকে ফেলে রাখা হয়েছে গুমোট স্যাঁতস্যাঁতে পরিত্যক্ত কারাগারে। এর ওপর প্রতিনিয়ত সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী নেতারা সমস্ত শিষ্টাচার, সুরুচিকে অবজ্ঞা করে দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে কটূক্তি ও ব্যঙ্গ করে যাচ্ছেন। এটি কেবল মনুষ্যত্বহীন বিবেকবর্জিত মানুষদের দ্বারাই সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র নেতারা গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে দেশনেত্রীর পছন্দ মতো বিশেষায়িত হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য দ্রুত ভর্তি করার আহবান জানিয়েছেন। অত্যন্ত পরিতাপ নিয়ে বলছি- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন- কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা করা হবে। তার আগের দিন নি¤œ আদালত হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর তিন দিন চলে গেছে কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেই। আদালতের নির্দেশ ও মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এখনো কার্যকর হয়নি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার অকল্পনীয় জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বর্তমান সরকারপ্রধান তাকে সাজানো মিথ্যা মামলায় কারাগারে রেখে বর্বর কায়দায় গত এক বছর ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে যাচ্ছেন।
রিজভী বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলে আসছি- বিএসএমএমইউ (পিজি)-তে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ নেই। আমাদের দাবি কতখানি সত্য ছিল তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি হলে তাকে চিকিৎসা দিতে ল্যাবএইড থেকে ধার করে চিকিৎসা যন্ত্র নিয়ে আসতে হয়েছে। আরো উন্নত চিকিৎসা দিতে তাকে নেয়া হয়েছে সিঙ্গাপুরে। আমরা তো আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশেই একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি করে আসছি। অথচ সেই দাবি প্রতিহিংসার কারণে বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৩তম কারাবন্দী দিবস। বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর দোসররা ২০১৭ সালের সেই বিভীষিকাময় কালরাতে বিনা মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। তাকে প্রায় পঙ্গু করে ফেলা হয় নির্যাতনের মাধ্যমে। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বর্তমান ভোটারবিহীন শাসকগোষ্ঠীরও নানা খড়গ তার ওপর চলমান রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, লায়ন আসলাম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল, শেখ রবিউল ইসলাম রবি, মামুনুর রশিদ মামুন, শেখ মোহাম্মদ শামীম, হযরত আলী, মিয়া নূর উদ্দিন অপু, মনোয়ার হোসেন, ইসহাক সরকার ছাড়াও দেশব্যাপী হাজার হাজার বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।